রাসিক নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ আ.লীগ নেতা সাহুর
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী সিটি নির্বাচনে চার মেয়র এবং ১১৭ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে টাকাওয়ালা শাহাদাৎ আলী সাহু। ১৭ নং ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর প্রার্থী মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকেও (মেয়র প্রার্থী) ছাড়িয়ে গেছে সাহুর সম্পদ।
লিটনের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ সাত লাখ হলেও কাউন্সিলর প্রার্থী সাহুর শুধু নগদ আছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৫১২ টাকা। নগরীতে আছে তার আটটি বাড়ি। যেগুলোর বেশ কয়েকটি বহুতল। বছরে আয় করেন দুই কোটি টাকার বেশি। তার স্ত্রী বছরে আট লাখ টাকার বেশি আয় করেন।
জানা যায়, এককালে এলাকার মানুষের কাছে সাহুর পরিচিতি ছিল ভূমিদস্যু হিসেবে। বিবাদীয় জমি-জমা কম দামে কিনে দখলে নিয়ে বেশি দামে বেচতেন। এলাকায় যেখানে মনে করেছেন সেই জমি তিনি কিনে নিয়েছেন।
দাখিলকৃত হলফনামাতে সাহু তার সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন তা দেখে কপালে চোখ উঠেছে নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও। মাত্র সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন শাহাদাৎ আলী সাহুর উত্থান নিয়েও নগরীতে রয়েছে নানা আলোচনা। বিদেশেও তার সম্পদ আছে বলে অনেকেই জানেন। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।
হলফনামায় সাহু তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন এক কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১৪ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে তিন কোটি টাকা। হাতে নগদ আছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৫১২ টাকা। স্ত্রীর বার্ষিক আয় সাত লাখ ৫০ হাজার ৪৮৫ টাকা। স্ত্রীর ব্যাংকে রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা। এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
সাহুর সম্পদের মধ্যে রয়েছে একটি প্রাডো জিপ গাড়ি, একটি পিস্তল, ২১ বিঘা জমি এবং নগরীতে আটটি বাড়ি। এর মধ্যে নিজের নামে ৫টি বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে আছে ৩টি। নিজের নামে থাকা ৫টির মধ্যে তিনতলা একটি, পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবন একটি, তিনতলা আবাসিক ভবন একটি, পাঁচতলা আবাসিক ভবন একটি এবং দোতলা আবাসিক ভবন দুটি। স্ত্রীর নামে তিনটির মধ্যে রয়েছে ছয়তলা একটি আবাসিক ভবন এবং নির্মাণাধীন একটি পাঁচতলা বাড়ি ও ১০ তলার একটি নির্মাণাধীন ভবন।
এত সম্পদ কীভাবে করলেন জানতে চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাৎ আলী সাহু বলেন, আমি অনেক বছর ধরে জমি কেনাবেচার ব্যবসা করি। প্লটের ব্যবসা করি। এর মাধ্যমে টাকা-পয়সা উপার্জন করেছি এবং সবটাই বৈধ উপায়ে। এখস নির্বাচনের সময় অনেক প্রার্থী অনেক কথা বলবে আবার অনেকে খারাপ মন্তব্য করবে তবে সেগুলো সত্য নয়।
৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থী মামলার আসামি
রাজশাহী সিটির ৩০টি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ১১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৩৮ জনের নামে এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুজ্জামান সর্বাধিক ২০ মামলার আসামি। মামলাগুলোর বেশির ভাগই বিস্ফোরকদ্রব্য এবং সন্ত্রাসবিরোধী নাশকতা আইনের। কামরুজ্জামান কারাগারে থেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আফজাল হোসেনের নামে আছে ১৪টি মামলা। মামলাগুলোর অধিকাংশই নাশকতার। আফজাল হোসেনের দাবি, সব মামলাই রাজনৈতিক। মনোনয়নপত্র তোলার পরও তার নামে দুটি মামলা হয়েছে দুই থানায়। মামলাগুলোতে জামিনে আছেন তিনি।
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবদুস সামাদের নামে আছে ছয়টি মামলা। কয়েকটি থেকে খালাস পেয়েছেন। কারাগারে থেকেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ২৫ মে জামিনে মুক্তি পান।
২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মুখলেসুর রহমানের নামে আছে সাত মামলা। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রবিউল ইসলামের নামে আছে চার মামলা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কামাল হোসেনের নামে একটি হত্যা মামলা চলমান আছে।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুজ্জামানের নামে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যা মামলাসহ দুটি মামলা আছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জহিরুল ইসলামের নামে একটি হত্যা মামলা থাকলেও তাতে খালাস পেয়েছেন। তবে এখনো একটি অস্ত্র মামলা আছে আদালতে।
এছাড়া পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে তিনটি করে মামলা চলমান আছে। এদের মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলিফ আল মাহামুদের নামে তিনটি মামলা বিচারাধীন। আগে ছয়টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ২৭ নম্বরের কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ারুল আমিনের নামে তিনটি বিচারাধীন মামলা আছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী টুটুল তিন মামলার আসামি। ২৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী তরিকুল আলম পল্টুর নামে মামলা আছে তিনটি। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আশরাফ বাবু তিন মামলার আসামি।
তবে আরও ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থী আগে একাধিক মামলার আসামি ছিলেন। সেসব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
জানা যায়, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ১০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ৪৬ জন। তিন জনের নামে আগে মামলা থাকলেও এখন নেই। তবে চার মেয়র প্রার্থীর কারও নামেই কোনো মামলা নেই। রাসিক নির্বাচনে আজ (১ জুন) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। ভোট গ্রহণ ২১ জুন।