এখনো বন্ধ হয়নি ঢলন প্রথা, ৪৬ কেজিতে আমের মণ

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩; সময়: ৯:১৪ অপরাহ্ণ |
এখনো বন্ধ হয়নি ঢলন প্রথা, ৪৬ কেজিতে আমের মণ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাঘা : আম কেনা-বেচায় ‘ঢলন’ প্রথায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ওজন ওদামে ঠকছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে নিজস্ব ওজনরীতিতে আম বেচাকেনা চলছে রাজশাহীর বাঘায়। উপজেলার বিভিন্ন আম বাজারে ‘ঢলন’ দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা । দেশের প্রচলিত নিয়মনীতি অনুযায়ী ৪০ কেজিতে মণ হলেও আমের মণ ধরা হচ্ছে ৪৬ কেজিতে মণ। ২টি ক্যারেটসহ আমের মণ ধরা হচ্ছে ৫০ কেজিতে মণ। কেজি ২টি ক্যারেটের ওজন ৪ । প্রচলিত নিয়ম না মেনে ক্রেতাদের কাছ থেকে এক মণে ৬ কেজি আম বেশি আদায় করছেন আড়তদাররা ।

জানা গেছে, আড়তদাররা এক মণের দামে ৪০ কেজির ওপরে যেটুকু বেশি নেন, তার নাম দিয়েছেন ‘ঢলন’। এই ‘ঢলন’ বাদে আম কিনেন না ব্যবসায়ীরা। ‘ঢলনপ্রথা’ সরকারি নিয়মে বাতিল করা হলেও প্রশাসনের নজরদারির দূর্বলতার এই ‘ঢলন’ প্রথা এখনো চালু আছে। এতে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন কাঁচা কৃষিপণ্যের ওজন পরে কমে যায়,তাই তারা ৪০ কেজির ওপরে বেশি নিচ্ছেন ‘ঢলন’ হিসেবে। এভাবে চাষিদের জিম্মি করে আম কিনছে ব্যবসায়ীরা।

চাষিরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের কৃষিপণ্য, এক মণে অতিরিক্ত ‘ঢলন” দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। চাষিদের পণ্য কিনতে ‘ঢলন” বাদে নিতে চান না ব্যবসায়ীরা । দীর্ঘদিন ধরে এই ‘ঢলনপ্রথা’ বাতিলের দাবি জানালেও কাজে আসছেনা চাষিদের দাবি। প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি কেহই তাদের কথায় কান দেননি।

ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পণ্য ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে যে পরিমান ‘ঢলন’ নেন, রাজশাহীর বাইরে বিভিন্ন জেলার আড়তে গিয়ে সেই পরিমান ঢলন দিয়ে বিক্রি করতে হয় না তাঁদের।

বুধবার (৭ জুন) উপজেলার বিভিন্ন বাজার/আড়ত দেখা গেছে, আম বেচাকেনা করতে। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম বেচা কেনা হচ্ছে। এসব আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। সেখানে ৪০ কেজির মণের কাছে নিচ্ছেন ৪৬ কেজি। কোথাও কোথাও কৌশল অবলম্বন করে প্লাষ্ট্রিকের ২টি ক্যারেট (ঝুড়ি) ভর্তি আমের ওজন ৫০ কেজি নিচ্ছেন। পরে ২টি ক্যারেটের ওজন বাদ দিচ্ছেন ৪ কেজি। কিন্তু একেকটি ক্যারেটের ওজন ২ কেজির কম। এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা ।

উপজেলার অমরপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, ৪০ কেজিতে মণ হলেও ৪৫ কেজির মণ ধরে হিমসাগর আম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। উপজেলার পীরগাছা গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, ডিজিটাল ওয়েট মেশিনে ওজন দিয়ে ২টি ক্যারেট (ঝুড়ি) সহ ৫০ কেজি আমের ওজন ধরা হয়। ব্যবসায়ীরা ২টি ক্যারেটের ওজন বাদ দিয়েছে ৪ কেজি। কিন্তু ২ ক্যারেটের ওজন ৩ কেজির একটু ওপরে হয়। সেক্ষেত্রে ৪০ কেজির জায়গায় প্রায় ৪৬ কেজি মণ হিসেবে আম বিক্রি করতে হয়েছে। উপজেলার বাউসা গ্রামের একাব উদ্দিন জানান, বিক্রির ক্ষেত্রে ২টি ক্যারেটসহ লখনা আমের ৫০ কেজিতে মণ ধরা হয়েছে। ২টি ক্যারেটের ৪ কেজি ওজন বাদ দিয়েছে । এতে তার মূল আমের ওজন পড়েছে ৪৬ কেজিতে মণ।

উপজেলার মিলিক বাঘার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ‘বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজ’ নামে কাঁচামালের আড়ত আমসহ কৃষিপণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। প্রতিবছরের মতো এবারেও আম কিনে রাজশাহীর বাইরের শহরে পাঠাচ্ছেন। ২টি ক্যারেটের ওজন কেজি বাদ দিয়ে ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনছেন।

এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারি হাবিবুর রহমান বলেন, আম কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন আড়তে নেওয়ার পথে পচে যায় । এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এ জন্যই ‘ঢলন’ নেওয়া হয়। ২টি ক্যারেট বাদে ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বড় আম ব্যবসায়ী অরুণ কুমার বলেন, কাঁচা মালের কারণে ‘ঢলন’ নেন। যারা আড়ত কিংবা বাজারে আম কিনেন। এ প্রথা অনেক আগে থেকেই চালু আছে। আর যারা বাগান কিনেন,তারা বাগানে ঝুড়ি ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। সেখানে তারা মণে ১ কেজি ধরে দিয়ে বিক্রি করেন। তবে সরকারের ওজনরীতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে সকলেই নিয়ম মেনে বেচা-কেনা করতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার বলেন,ওজনের এনিয়ম কোথাই নেই। শুধু বাঘাতেই নয়, চাপাইনবাবগঞ্জ, বানেশ্বর ঢলন ওজনের নিয়ম চালু আছে। তবে বিষয়টি জানার পর ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কৃষক-ব্যবসায়ী, কেহই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং সরকারি নিয়মে ওজন প্রথা চালু রেখে কেনা-বেচার কথা বলা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে