এখন প্রার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার নেওয়া

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩; সময়: ১০:৩৩ অপরাহ্ণ |
এখন প্রার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার নেওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপিসহ অধিকাংশ দল না থাকায় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী আঁচ সেভাবে নেই, ভোটারদের আগ্রহের ঘাটতি গাজীপুর, খুলনা, বরিশালের নির্বাচনে অনেকটাই স্পষ্ট। প্রার্থীরাও মানছেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনাটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রাখছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা। চরমোনাই পীরের মুরিদ আর ভক্তদের ‘ভোট ব্যাংকে’ ভর করে খুলনা ও বরিশালে তাদের প্রার্থীই ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে।

কিন্তু সোমবার বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর উপর হামলার পর দলটি ফল প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি সিলেট ও রাজশাহী থেকেও তাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। ফলে সিলেট ও রাজশাহীর নির্বাচনী হাওয়া থেকে হাতপাখার বাতাস উধাও হয়ে গেলে ভোটের আমেজ আর কতটুকু থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত কত সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে যাবেন, তা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিষয়টি যে আওয়ামী লীগকে ভাবাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়েছে রাজশাহীতে নৌকার মেয়র প্রার্থী, দুই বারের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কথায়।

খুলনা-বরিশালের নির্বাচনের দিন ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে এক আলোচনায় খায়রুজ্জামান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ৭০ ভাগ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। সেটা আমরা করতে পারলে সব ক্ষেত্রে সফল হবো। যেমন- বিএনপিকে মোকাবেলা করা হল, প্রার্থীকেও জয়যুক্ত করা হল। এরপর আমার প্রধানমন্ত্রীকে গিয়ে বলতে পারব, শত ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বিপুল সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী করেছে। অতএব, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।”

লিটন এর আগে তিনবার নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে দুইবার হারিয়ে মেয়র হয়েছেন; একবার হেরেছেন। লিটন ২০১৮ সালে যখন দ্বিতীয়বার মেয়র হন, তখন রাজশাহীতে ভোট পড়েছিল ৭৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে যখন পরাজিত হন, তখন ভোটের হার ছিল ৭৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর আগে ২০০৮ সালে যখন প্রথমবার মেয়র হন, তখন ভোট পড়েছিল ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

ফলে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লিটন যে ৭০ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রমুখী করার কথা বলছেন, তা অসম্ভব কিছু না। কারণ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার রেকর্ডও আছে। ২০০৮ সালে খুলনায় ভোটের হার ছিল ৮২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। কিন্তু এবারকার পরিস্থিতি ভিন্ন।

সুসাশনের রাজশাহী জেলার সভাপতি শফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আগের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা পাস করাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতেন। বিএনপি যেহেতু মাঠে নেই, দলে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই; ফলে এখন তাদের পাস করার চ্যালেঞ্জ আর নেই। সেই বিপদ তাদের কেটে গেছে। এখন তাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বেশি বেশি ভোটারদের কেন্দ্রে হাজির করা।”

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, “ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার, আমরা করব। আমাদের টার্গেট ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভোটারকে কেন্দ্রে উপস্থিত করা।

“ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যান। এবার তাদের সঙ্গে প্রতি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে কাজ করবেন।”

তবে রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, “গাজীপুরের নির্বাচনের পর আমরা ধরে নিয়েছিলাম রাজশাহীতে ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হবে। কিন্তু বরিশাল ও খুলনার নির্বাচন এবং ইসলামী আন্দোলনের ভোট বর্জনের কারণে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। আমি আজ (মঙ্গলবার) অনেক ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মনোভাব তেমনটাই পেলাম।”

১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু বলেন, “সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটিকে শুধু ‘শঙ্কা’ হিসেবে নিলেও বাস্তবে এমনটাই হবে, এভাবে আমরা ভাবছি না। কারণ, এর বিরুদ্ধে আমরা সক্রিয়ভাবে মাঠে আছি।

“মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি, সাড়াও পাচ্ছি। সুতরাং, ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে আসে এবং কারও দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়, সেটিকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিচ্ছি।”

রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম বলেন, “ইভিএমে আমাদের প্রতীক থাকলেও হাতপাখার কোনো কর্মী-সমর্থক ভোটকেন্দ্রে যাবে না। আমরা কর্মীদের মানা করে দিয়েছি। আমাদের এই ভোট নিয়ে আরও কোনো আগ্রহ নেই।”

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে