বাগমারায় ৩০ মণের ‘বাদশা’, দাম ১২ লাখ টাকা

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩; সময়: ১২:২১ পূর্বাহ্ণ |
বাগমারায় ৩০ মণের ‘বাদশা’, দাম ১২ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিক্রি হবে ‘বাদশা’। তবে ‘বাদশা’ কোনো শক্তিশালী মানুষের নাম নয়। এটা আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য লালন-পালন করা একটি বিশাল ষাঁড়ের নাম। সাদা-কালোর মিশ্রণে সুঠাম স্বাস্থ্যের বাদশার ওজন প্রায় ৩০ মণ। এই ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের বাড়িতে লালন-পালন করেছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী আশেদা বিবি। লুৎফর পেশায় একজন কৃষক। তার স্ত্রী আশেদা বিবি গৃহিণী। তারা সাড়ে তিন বছর ধরে লালন-পালন করে ষাঁড়টি এমন সুঠাম বানিয়েছেন। বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখার জন্য তাদের বাড়িতে প্রায়ই আশপাশের মানুষ ভিড় করে।

ষাঁড়টি আনুমানিক লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বুকের বেড় ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। প্রায় ১২২০ কেজি ওজনের ষাঁড়টির দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে কয়েকজন ষাঁড়টির ৯ থেকে ১০ লাখের মধ্যে দরদাম করেছেন। ন্যায্যমূল্যে পেলে ষাঁড়টি বিক্রি করে দেবেন বলে জানান গরুটির মালিক লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, বাদশাকে হাটে নেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বিভিন্নভাবে ষাঁড়টির ছবি ও বর্ণনা অনলাইনে দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছি। কেউ যদি কিনে আমাদের বাড়িতে রেখে ঈদের আগের দিন পৌঁছে দিতে বলে আমরা তা দিব।

লুৎফর রহমান বলেন, বাড়িতে দেশী গরুর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভির জন্ম হয়। সেই গাভি লালন-পালন করে একই জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাছুর জন্ম দেয়। তিন বছর আগে দেড় লাখ টাকায় সেই গাভি বিক্রি করে ষাঁড়টি লালন-পালনের খরচ চালানো হচ্ছে।

বাদশার খাদ্য তালিকায় আছে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, চালের গুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া, খইল, ছোলা ও খুদের ভাত। সব মিলে দিনে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে খাবার খায় বাদশা। শুরুর দিকে খাবার কম খেলেও দিনে দিনে তার খাবারের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতিদিন বাদশার পিছনে খরচ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

জন্মের পর থেকেই ষাঁড়টি দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করছেন বলে জানান আশেদা বিবি। তিনি বলেন, সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে একটি গাভি কিনেছিলাম। সেই গাভি থেকে ষাঁড়টির মা হয়েছিল। ষাঁড়টিকে পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে লালন-পালন করেছি। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। তার পেছনে সাড়ে তিন বছরে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। ঈদের আগে এখন ভালো দামে বিক্রি করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বাদশাকে গোসল করাতে হয় দিন রাত মিলে ৫ থেকে ৬ বার। সমস্ত পানি টিউবওয়েল থেকে তুলতে হতো। কমপক্ষে ১০০ বালতি পানি তোলা লাগে। এতে অনেক কষ্ট হতো। তাই পানি তোলা মটার বসানো হয়েছে রাজার গোসলের সুবিধার জন্য। এছাড়া সব সময় তিনটা ফ্যান চলে। বিদ্যুৎ গেলে আইপিএসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের ঘরে ফ্যান না চললেও রাজার মাথার ওপরে চলে। রাজার খাবারের টাকা জোগাড় করতে মানুষের কাজে যাই।

বাগমারা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবিব বলেন, আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত উপজেলায় ১০ থেকে ১৫ মণ ওজনের কিছু বিশাল আকৃতির ষাঁড় আছে। এছাড়াও শুনেছি বাদশার ওজন ৩০ মণের উপরে। সেটিই উপজেলায় সব থেকে বিশাল আকৃতির ষাঁড়।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৭টি। এছাড়াও রাজশাহী জেলার প্রতিটি উপজেলায় মোটা তাজা বা বেশি মাংস উৎপাদনকারী গরু রয়েছে ৫ থেকে ৬টি। তবে জেলার মধ্যে কোন গরু সবচেয়ে বেশী ওজন তা এখনো নিরুপন করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে