ঢাবিতে ৩৬ ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম স্থগিত

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩; সময়: ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ |
ঢাবিতে ৩৬ ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম স্থগিত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজা কালী নারায়ণ বৃত্তি তহবিল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৩ সালে। সে সময় এই বৃত্তি ছিল শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই কাঙ্ক্ষিত। বৃত্তিপ্রাপ্তরা ৫০ টাকা করে পেতেন। কথিত আছে, তখন ৫০ টাকা দিয়ে ছোট একটি বাড়ি করা যেত। তবে কালের বিবর্তনে এই টাকা খুবই সামান্য বিবেচিত হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে বৃত্তি স্থগিত ছিল। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ টাকা যোগ করে ফের এই বৃত্তি চালু করেছে।

দীর্ঘ সময় পর এটি চালু হলেও বিভিন্ন সময়ের ৩৬টি ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম নানা কারণে স্থগিত আছে। এগুলো চালুর উদ্যোগ দেখা যায় না। তহবিল স্বল্পতা, ট্রাস্ট ফান্ডের নীতিমালার জটিলতা, প্রশাসনিক লোকবলের অভাব– প্রভৃতি কারণে এগুলো স্থগিত আছে। এগুলো ফের চালু করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা বা উদ্যোগ তেমন একটা নেই। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

অগ্রণী ব্যাংক বক্তৃতামালা ফান্ড, আশালতা সেন স্মারক স্বর্ণপদক, কে কে দত্ত স্মারক আইন বক্তৃতা, ফুলার মেমোরিয়াল ফান্ড, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সুলতানা আহমেদ কামাল ট্রাস্ট ফান্ড, ফার্মেসি ও বোটানি বিভাগে হামদর্দ শহীদ হাকিম

মোহাম্মদ সাঈদ স্মারক বৃত্তি তহবিল, দর্শন বিভাগে দাতা শফিক রেহমানের সাইদুর রহমান ফাউন্ডেশন, ক্রীড়ায় মৌলভী আবদুল মতিন স্মারক স্বর্ণপদক তহবিল ও লে. কর্নেল (অব.) মতিউর রহমান স্মারক বৃত্তি তহবিলের কার্যক্রম স্থগিত আছে। অগ্রণী ব্যাংক বক্তৃতামালা ফান্ডে ৮ লাখ টাকা এবং অন্য ফান্ডগুলোতে দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা করে আছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে শুরু হয় ট্রাই সিটিস বাংলাদেশ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তির কার্যক্রম। তবে শিক্ষার্থী নির্বাচন ‘একটু কঠিন’– এমন যুক্তি থেকে এটি স্থগিত রয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে আবদুর রব চৌধুরী চেয়ার ফর ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিক্স ট্রাস্টের অধীন চেয়ার অধ্যাপকের জন্য মাসে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারিত। ফান্ডে ১০ লাখ টাকা থাকলেও এটি বন্ধ রয়েছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগে মীর ফখরুজ্জামান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডটি মীর ফখরুজ্জামান স্বাধীনতাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় ২০১৮ সালে স্থগিত করা হয়।

নীলকান্ত সরকার গোল্ড মেডেল ও দেবেন্দ্রকুমার রায় সিলভার মেডেল ট্রাস্ট ফান্ড দুটি ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলোতে বর্তমানে যথাক্রমে ৮ হাজার টাকা ও ২ হাজার টাকা, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পোপ মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল ট্রাস্টে প্রায় ৯ হাজার টাকা, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এইচপি রায় গোল্ড মেডেল ট্রাস্টে ৬ হাজার টাকা, সুলতানা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডে সাড়ে ৯ হাজার টাকা, ব্রেনান্ড প্রাইজ ফান্ড ট্রাস্টে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা আছে।

পালি ও বুড্ডিস্ট বিভাগে অধ্যক্ষ পি আর বড়ুয়া বৃত্তি তহবিল ও আবদুল হাকিম-আসাদুন্নেছা ফাউন্ডেশন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে খন্দকার এ কে একরাম আলী মেমোরিয়াল বৃত্তি তহবিল, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সৈয়দা আখতারুন্নেসা বেগম বৃত্তি তহবিল, নাসিরুদ্দীন ফাউন্ডেশন, ফিয়াস ফাউন্ডেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বেগম তাহমিনা আলাউদ্দিন বৃত্তি তহবিল, আলহাজ এ জেড এম রেজাই করিম ফাউন্ডেশন, চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে চৌএনলাই স্মারক বৃত্তি, আবদুর রব চৌধুরী স্মারক বৃত্তি, হাফিজউদ্দিন ফাউন্ডেশন, সাহেবজাদা সৈয়দ আবু নাসের আলাউদ্দিন বৃত্তি, হালিমা রউফ বৃত্তি, রশিদুল হাসান স্মারক বৃত্তি ট্রাস্ট ফান্ডগুলোতে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা করে আছে।

রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, স্মারক বক্তৃতা, স্বর্ণপদক, সর্বোচ্চ সিজিপিএ এবং অসচ্ছলতার কারণে বৃত্তি ইত্যাদি উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০টি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা হয়। এখন মোট ট্রাস্ট ফান্ড চালু আছে ৩৯০টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, অনুষদ এবং হলে এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী এগুলোর অধীনে বৃত্তি পান।

জানতে চাইলে ট্রাস্ট ফান্ড সম্পর্কিত রেজিস্ট্রার অফিসের শিক্ষা-৪ শাখার আজাদ হাজারী বলেন, তাঁদের লোকবলের অভাব রয়েছে। আগে সাতজন থাকলেও বর্তমানে তিনজন কাজ করছেন। প্রয়োজনীয় লোক থাকলে কয়েকটি ফান্ড চালু করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ট্রাস্ট ফান্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন জানান, ট্রাস্ট ফান্ডগুলো ফের চালুর উদ্যোগ নেবেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ট্রাস্ট ফান্ডই দাতারা নিজেদের নামে চান। যদি তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে একেবারে দিতেন তা হলে কিছু করা যেত। সমন্বয় করে অথবা অন্য উপায়ে এগুলো চালু করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এটি করতে পারলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে