শান্ত তারুণ্যের ডেভিড গাওয়ার : ডোনাল্ড

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩; সময়: ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ |
খবর > খেলা
শান্ত তারুণ্যের ডেভিড গাওয়ার : ডোনাল্ড

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সদ্য সমাপ্ত মিরপুর টেস্টে আফগানিস্তানকে রেকর্ড ৫৪৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই টেস্টে ব্যাটারদের পাশাপাশি বল হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন টাইগার পেসাররাও। তাসকিন আহমেদ থেকে শরীফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেনরা সবাই বল হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। যার পেছনে গুরুর ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। তিনি কথা বলেছেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়েও।

সবশেষ টেস্টের আদ্যপান্ত নিয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্টকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।

মিরপুরের মতো উইকেটে টেস্টে ‌৩ পেসার খেলানো একটু সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল কিনা?

ডোনাল্ড : আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি পজিটিভ ক্রিকেট খেলার এবং পেসারদের পাশে থাকার। সময় লেগেছে কিছুটা, তবে ঠিকই এখন আমাদের পেস বোলিং আক্রমণ একটা সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে গেছে। আমি মনে করি তিনজন পেসারকে খেলানো খুবই ইতিবাচক দিক। আপনি জানেন, মিরপুরে বাংলাদেশ সবসময় দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে খেলে আসছে। উইকেটে কিছুটা ঘাস থাকায় টস জিতে শুরুতে বোলিং নেওয়াটা আফগানিস্তানের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তবে আমি মনে করি এমন সবুজ উইকেটে প্রথম দিন আমরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছি। আর একাদশে তিন পেসার খেলানোটা অনেক বড় ইতিবাচক দিক ছিল, আমার মতে সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল এটা।

সর্বোচ্চ পারফর্ম করার ব্যাপারে তিন পেসারের ওপর আপনাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল?

ডোনাল্ড : তাসকিন-এবাদতরা উভয় ইনিংসেই দারুণ খেলেছে। গত এক বছর ধরে আমরা দারুণ মানসিকতা নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং করছি। আমি মনে করি, প্রস্তুতি টেস্ট ক্রিকেটে বড় একটা জিনিস। অনেক গরম ছিল, তারপরও ক্রিকেটাররা ছিল মনযোগী। তারা যেমন বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেছে, ভালো কিছু ক্যাচও নিয়েছে। দল হিসেবে কৌশলের দিক থেকে যদি বলি তাসকিন, এবাদত এবং শরিফুল তিনজনকে নিয়েই গর্ব করা যায়। দুই ইনিংসেই তারা নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছে। আমি আগেও বলেছি, আমরা খুবই ইতিবাচক এবং চন্ডিকা (হাথুরুসিংহে) পেসারদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা জানতাম তারা পারবে এবং এই টেস্টে তারা সেটাই করেছে।

অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে লিটনকে কেমন দেখলেন?

ডোনাল্ড : আমি মতে লিটন খুবই কার্যকরী এবং খুবই আক্রমণাত্মক। এখানে কোনো সন্দেহ নেই যে, অধিনায়কের মতো বড় দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা রাখে লিটন। সে যেভাবে বোলারদের পাশে ছিল এবং দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে তাতে আমি সত্যিই মুগ্ধ। লিটনের অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন শান্ত, কেমন লেগেছে এই ব্যাটারের ইনিংস?

ডোনাল্ড : আমি শান্তকে যতটুকু দেখেছি, আমার মনে হয় ডেভিড গাওয়ারের ইয়াং ভার্সন শান্ত। তার হাতে প্রচুর শট আছে, সে একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ইতোমধ্যেই শান্ত দেখিয়েছে সে একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে সে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। দুই ইনিংসেই তার সেঞ্চুরি বলে দেয় রান করার জন্য সে কতটা ক্ষুধার্ত। আমি শান্তকে নিয়ে সন্তুষ্ট। সে মাঠের চারপাশেই রান করছে এবং খেলছেও আক্রমণাত্মক। বিশেষ করে টেস্টে ক্রিকেটে সে দ্রুত রান তুলতে পারছে। আপনাকে যেটা আগেই বলেছি, সে মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। মূলত সে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং তার ফল পাচ্ছে। ফিল্ডিংয়েও একাধিক জায়গায় সে দুর্দান্ত, সবমিলিয়ে আমি তাকে নিয়ে খুবই খুশি।

ইনজুরি থেকে ফিরেই টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করাটা তাসকিনের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

ডোনাল্ড : তিন সপ্তাহ ধরে আমার নিজেরও ডান হাতে অনেক সমস্যা ছিল। তবে ডাক্তার দেখানোর পর এখন ভালো আছি।যে কারণে তাসকিনের জন্য এটা লম্বা পথ ছিল, সে ৭ সপ্তাহ রিহ্যাবে ছিল এবং সেখান থেকে ফিরে ব্যাটিং-বোলিং করেছে এবং একটু একটু করে ছন্দে ফিরেছে। টেস্ট ক্রিকেটে ফেরাটা তার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। প্রথম ইনিংসে (সদ্য সমাপ্ত আফগানিস্তান টেস্টে) সে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেনি।

তখন আমরা বলেছি, ফেরার ম্যাচে খুব বেশি আশা রাখতে নেই। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে, আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে যখন আমি চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছি। সবার আগে আপনার নিজেকে নিয়ে ভাবা উচিত, তবে উইকেট নিতে পারলে অবশ্য সেটা আপনার গুরুত্ব বাড়াবে।

তাসকিনের প্রতি আমার বার্তা ছিল, তোমার কাছে দল যা চায় তুমি সেখানেই লক্ষ্য রাখো। ডট এবং মেইডেন করার চেষ্টা করো, শুধু নিজের কাজটা করে যাও। সে তা করতে পেরেছে, তাতে আমি খুশি। এরপর তার সঙ্গে টিম বাসে দেখা হওয়ার পর আবারও এটা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে।

অনেকদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা শরীফুল ইসলামকে কেমন দেখলেন?

ডোনাল্ড : প্রথমত শরিফুলকে বাংলাদেশ টেস্ট দলে ফিরতে দেখে আমার ভালো লাগছে। আমি মনে করি, শরিফুল ভালো ছন্দে আছে। সে ক্যাম্পে সুইং এবং পেসে দুর্দান্ত বোলিং করে আমাদের মন কেড়ে নিয়েছিল। যেকোনো টেস্ট ম্যাচে বাঁ-হাতি পেসারকে খেলতে দেখে আমার ভালো লাগে। ডান-হাতিদের বিপক্ষে অফ স্টাম্পের বাইরে মিরাজের ফুটমার্ক সে দারুণভাবে ব্যবহার করেছে। দুই ইনিংসেই কার্যকরী ছিল সে।

এবাদত-তাসকিন ও শরীফুল এই তিন পেসার খেললেও সুযোগ হয়নি খালেদের…

ডোনাল্ড : এবাদত দুর্দান্ত বোলিং করেছে। সত্যিই সে একজন প্রতিভাবান পেসার। এখানে প্রত্যেকেই কার্যকরী। এই বোলিং আক্রমণ কতটা ভালো সেটা আমি বলে শেষ করতে পারব না। আমরা এখন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ দল। খালেদের সুযোগ হয়নি, তবে সে কিন্তু বাজে কিছু করেনি। তার জন্য খারাপ লেগেছে এবং আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কোনটা আমাদের জন্য ভালো হয়। একে-অপরের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। পেস আক্রমণ যত বড় এবং শক্তিশালী হবে, এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই ভালো।

তরুণ পেসার মুশফিক হাসানকে নিশ্চয় দেখেছেন! সে আসলে কেমন…

ডোনাল্ড : তরুণ মুশফিকের অনুভূতিটাও আমি বুঝতে পারছি। সে নিজেকে প্রমাণ করেই এসেছে। এখন সবাই জানে যে, বিশ্রাম করার সুযোগ নেই। কারণ অন্য একজন তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য এসব ব্যাপার নিয়ে আমরা দলের মধ্যে আলোচনা করি, কে খেলবে এবং এটা কার প্রাপ্য।

তবে আমরা সবসময়ই বিকল্প রাখার চেষ্টা করি। যাতে তাসকিনের প্রয়োজন হলে আমরা তাকে বিশ্রাম দিতে পারি। এখন এবাদতও আছে। মোটকথা অনেক বিকল্প আছে এখন। এটা আরেকটা দুর্দান্ত টেস্ট ছিল, সবারই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে