অপরূপ সৌন্দর্যে বেষ্টিত মহেরা জমিদার বাড়ী

প্রকাশিত: ২২-০৬-২০২৩, সময়: ১৮:০৯ |

ইন্দ্রাণী সান্যাল : প্রকৃতির অনিন্দ্য নিকেতন টাঙ্গাইল জেলার মহেড়া জমিদার বাড়ী। তার রূপশোভা বিস্তার করে কালের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক উজ্জ্বল ভাস্কর্য।

নিভৃত পল্লীতে ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা নির্মল, নির্ঝর, শান্ত পরিবেশ আকুল করে দর্শকদের। আগন্তুককে একবার নয় বারবার এই সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ জানায় অদ্ভূত কারুকার্য বেষ্টিত ভবন, সাথে রকমারি দেশী-বিদেশী ফুলের সমারোহ ও বাহারী পাতাবাহার দ্বারা ঘেরা ফুলের বাগান।

গাছে গাছে সকাল সন্ধ্যা পাখির কলকাকলিতে মুখর শান্ত পরিবেশ মনকে দিবে এক অন্যরকম ভ্রমানুভুতি। চারদিকে নানা বৈচিত্র্যের ফুলের রং ও গন্ধের সমারোহ। যেন নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য। এক কথায় যেন ধরায় স্বর্গধাম।

ধারনা পাওয়া যায় স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে ভবনসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সময়ের সাথে ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে শোভিত হয়ে উঠে কালের স্বাক্ষী দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ীটি। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৯০ দশকের পূর্বে জমিদার বাড়ীটি তৈরি হয়।

কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। তারা ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর সুবিশাল বাড়ীটি নির্মাণ করেন।

এরপর তারা মহেড়া গ্রামের গরিব মানুষের কাছে টাকা দাদন খাটাতে থাকেন এবং এলাকার প্রভূত উন্নতি করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়।

শুরু হয় জমিদারি। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ মোহন সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই শাসকরা এলাকায় বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, জলের ব্যবস্থাসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজও করেন।

এখানে আছে বড় বড় ৩টি ভবন আর কাছারি বাড়ী । এই ভবন গুলো এবং কাছারি বাড়ীর নাম মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ।

আরও আছে আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের থাকার বাড়ী এবং প্রার্থনার জন্য মন্দির। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি গেট। তাতে রয়েছে বিশাল কারুকাজ।

বাড়ীর সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি নাম বিশাখা সাগর। ভবন গুলোর পিছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দুইটা পুকুর এবং সামনে সুন্দর ফুলের বাগান। ভবন গুলো আর বিশাখা সাগর এর মাঝখানে রাস্তার পাশে কয়েকটা উচু গোল কারুকার্যময় স্তম্ভ।

কালীচরণ লজ-এর সামনে বেশ বড় একটা খোলা জায়গা বা মাঠ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

এরপর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ীটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পুলিশের প্রশিক্ষণকে আধুনিক এবং যুগোপোযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।

আর পুলিশের ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন হওয়ায় ট্রেনিং পরিচালনার জন্য জমিদার বাড়ীটির যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণসহ নতুন নতুন স্থাপনা তৈরী করার কারণে পুরানো স্থাপত্য কলার অপরুপ এই জমিদার বাড়ীটির সৌন্দর্য্য শুধু অক্ষত থাকেনি বরং তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপরে