নানামুখী চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩; সময়: ২:৫৭ অপরাহ্ণ |
নানামুখী চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

প্লাটিনাম জয়ন্তী থেকে মাত্র এক বছর দূরে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই দলটি। এই সুদীর্ঘ দিনে সুসময়ের পাশাপাশি এসেছে দুঃসময়ও। টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা এই দলটির সামনে এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জ। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। তাদের আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ওপর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমেরিকার নতুন ভিসানীতি। এছাড়া দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সব উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।

শুরুতে দলটির নাম নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নামকরণ হয় ‘আওয়ামী লীগ’।

সময়টি ছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর। ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ দলের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা।

১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগের কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’

এই আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন।

সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পান।

তাই তার দল এই আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এ রাজনৈতিক দলটি এ দেশের সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের লাখ লাখ মানুষ।

কিন্তু যে রাজনৈতিক দল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের নেতৃত্ব দিয়েছে, শুরু থেকেই সেই দলটিই নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।

২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি।

বৃহস্পতিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, সামনে ভোটযুদ্ধ। এই ভোটযুদ্ধকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরাশক্তি আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। তাই সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

বৈঠকে নির্বাচনি বছরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপরও জোর দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ তাদের কাছে এখন মাথাব্যথার কারণ এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

ভোটের আগে আসন ভাগাভাগিসহ কয়েকটি ইস্যুতে শরিকদের মধ্যে ঐক্যও ধরে রাখতে হবে দলটিকে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যোগ্য প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার তৈরি, দল ও সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরাসহ আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের।

দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-এদিন সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন।

একই দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আলোচনা সভারও আয়োজন রয়েছে।

এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে