রাজশাহীর বড়কুঠি এক অনন্য স্থাপনা

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩; সময়: ১:০৭ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর বড়কুঠি এক অনন্য স্থাপনা

আদিবা বাসারাত তিমা : রাজশাহী শহরের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। আর এই পদ্মা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রাজশাহী শহর। সেই পদ্মার তীরঘেঁষে রয়েছে বিশাল এক ভবন। যার নাম বড়কুঠি।

নির্দিষ্ট ভাবে এই ইমারতের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা না গেলেও বিভিন্ন সূত্রে জানাযায় এর নির্মাণকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডাচরা ভারতে তাদের কর্মকান্ড গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮১৪ সালে ইংরেজদের সাথে একটি চুক্তি করে বড়কুঠিসহ ভারতের সব ব্যবসা কেন্দ্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তর করে।

বড়কুঠির দায়িত্ব গ্রহণ করে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত তারা এটিকে তাদের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই বড়কুঠি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বড়কুঠি সাহেব বাজার ও রাজশাহী কলেজের দক্ষিণে এবং পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত।

ইট নির্মিত ও সমতল ছাদবিশিষ্ট এ ইমারতটি আঠারো শতকের প্রথমার্ধে ওলন্দাজ রেশম ব্যবসায়ীদের নির্মিত এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি। কুঠিটির বহির্ভাগ এর দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার ও প্রস্থ ১৭.৩৭ মিটার। দ্বিতলবিশিষ্ট এই ইমারতটি বিভিন্ন আয়তনের মোট ১২টি কক্ষে বিভক্ত। দ্বিতলে একটি সভাকক্ষসহ ৬টি কক্ষ আছে। কেন্দ্রে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ৯.৬০ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৬.৩০ মিটার আয়তনবিশিষ্ট আয়তাকার সভাকক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে বারান্দা এবং কক্ষের পশ্চিম দিকে দু’টি এবং পূর্ব দিকে এক সারিতে তিনটি কক্ষ বিদ্যমান।

প্রকৃতপক্ষে ওলন্দাজ বাবসায়ীরা জরুরি সময়ে ইমারতটি দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করত। এ জন্য ইমারতের ছাদে এবং নিচে বেশ কয়েকটি কামান শত্রুদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকত।

১৮৩৩ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে এলে কামানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এখানকার তিনটি পুরনো কামান এখনো রাজশাহী পুলিশ লাইন এ সংরক্ষিত আছে।

এ বড়কুঠিতেই বাংলার কৃষকদের ওপর নীলকর ইংরেজরা চালাত অমানুষিক নির্যাতন। এই দোতলা ভবনটার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটো ঘোরানো সিঁড়ি। এই সিঁড়ি দুটো ভবনটার মাটির নিচে চলে গেছে। আর মাটির নিচে রয়েছে এক বিশাল বড় রুম। এই মাটির নিচের রুমের ভেতর দিয়ে পদ্মা নদীর তলা দিয়েছিল এক বিশাল বড় একটা রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে নাকি একসাথে ১০টা ঘোড়া দৌড়াতে পারত। আর এ পথটার শেষ মাথা ছিল বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার রাজবাড়ি পর্যন্ত। এখন অবশ্য কর্তৃপক্ষ সিঁড়ি দুটোর নিচের দিকে অর্ধেক প্রাচীর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে রেখেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে