রাজশাহী-১ আসন: দ্বন্দ্বে দেবর-ভাবি, বিকল্প হতে চান ভাগ্নে

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৩; সময়: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী-১ আসন: দ্বন্দ্বে দেবর-ভাবি, বিকল্প হতে চান ভাগ্নে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরাবরই ভেডিওয়েট প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনের রাজনীতিতে আলোচনায় থাকে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে এ আসনটি। দল নির্বাচনে আসছে কি না তা নিয়ে শংসয় থাকলে এ আসনে বিএনপির কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

বিশেষ করে বিএনপির প্রয়াত প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালচনা। এরা হলেন, প্রয়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের সহধর্মিণী আভা হক, তার ভাই মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন ও ভাগ্নে ব্যারিষ্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। তারা তিনজনই রাজনীতিতে আসতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেবর-ভাবির মধ্যে এখন দ্বন্দ্ব অনেকটায় প্রকাশ্য বলে জানিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতারা।

তারা বলছেন, রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের তিনবারের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে শক্তভাবে মোকাবেলা করার মতই প্রার্থী প্রয়োজন। এ কারণে এখানে বিএনপির রাজনীতিতে কে আসছেন সেটার দিকেই আগ্রহ সবার। তারা চায় কর্মী বান্ধব শক্তিশালী প্রার্থী।

দলীয় ও স্থানীয় একাধিক জানা গেছে, শরিফ উদ্দিন সবেমাত্র দলে যোগদান করে রাজনীতি শুরু করেছেন। ফলে তার তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি বা অভিজ্ঞতা নেই। তার পক্ষে এখনো জনমতও গড়ে উঠেনি। এছাড়াও রুক্ষ আচরণের কারণে রাজনীতির শুরুতেই তিনি জনবিচ্ছিন্ন। একই কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীও তার থেকে দুরে। ফলে তিনি প্রয়াত ব্যারিষ্টার আমিনুলের বিকল্প নেতৃত্ব হয়ে উঠতে পারছেন না। বরং কর্মী-সমর্থকদের কাছ শরিফ উদ্দিনের থেকে আভা হক এবং ব্যারিষ্টার মিলনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনসমর্থন অনেক বেশী।

অভিযোগ রয়েছে, আভা হক এবং ব্যারিষ্টার মিলনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনসমর্থন বেশী থাকলেও তাদের রাজনীতির মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছেন না শরিফ উদ্দিন। আগামীতে তিনিই নির্বাচন করবেন বলে তাদের এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন। এ নিয়ে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে দুইভাগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি ফারুক চৌধুরীর মতো হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে ভোটের মাঠে লাড়াই করে বিজয়ী হওয়া তো পরের কথা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন এমন নেতা প্রয়োজন। সে দিক থেকে শরিফ উদ্দিনকে অনেকেই যোগ্য মনে করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু রুক্ষ আচরণের কারণে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়ে উঠৈছেন তিনি। কথায় কথায় নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করতে চান। আবার কর্কশ ভাষায় কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আভা হক ও ব্যারিষ্টার মিলন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে আভা হকের গ্রহনযোগ্যতা বেশী। তার সঙ্গে সবাই কথা বলার সুযোগ পায়। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বের কারণে তারা এখন এলাকায় আসছে না। তাদের এই দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসন প্রয়োজন বলেও মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার মত্যে উপজেলা বিএনপির আরেক নেতা জানান, শরিফ উদ্দিন ও আভা হককে নিয়ে বিএনপি এখন দুইভাগে বিভক্ত। এই বিভক্ত আরও প্রকট হচ্ছে। শরিফকে মনোনয়ন দিলে আভা হকের অনুসারীরা এবং আভা হককে মনোনয়ন দিলে শরিফ অনুসারীরা প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নামতে পারে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ দ্বন্দ্ব নিরসন বা তাদের বিকল্প কাউকে এখানে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।

গোদাগাড়ী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রুলু বলেন, প্রয়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের পরিবার থেকেই নেতৃত্ব আসবে। তবে কে আসছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে কি না সেটিও আমাদের জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমিনুল হক প্রয়াত হওয়ার পর মাঠে রয়েছেন তার ভাই মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন। কিন্তু তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছেন না এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতিতে তিনি নতুন হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। এক সময় হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।

নেতৃত্ব নিয়ে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আভা হক ও শরিফ উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। তাই তাদের বক্তব্য জানা সম্ভাব হয়নি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে