রাজশাহীতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষের সভায় বক্তব্য দিলেন এমপি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩; সময়: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষের সভায় বক্তব্য দিলেন এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

ইউপি (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন এই বিধি না মেনে হরিয়ান ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। মঙ্গলবার বিকেলে এই সভার আয়োজন করে হরিয়ান ইউনিয়ন যুবলীগ।

বর্ধিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা। এতে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইয়াছিন আলী, নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু সালেহ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বক্তব্য দেন।

এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি নার্গিস আক্তার শেলী, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ পলাশ, পবা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক তফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব ওবাইদুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক নূর হোসেন তালুকদার ও হাসান আহমেদ জুয়েল, পবা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম রাজু, হরিয়ান ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আল অঅমিন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ আহমেদ তুষার।

সভায় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘হরিয়ান ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী একজনকে নমিনেশন দিয়েছেন। যাঁরা নমিনেশন প্রত্যাশী ছিলেন, তাঁদের সবাইকে আমি ফোন দিয়েছি। আমি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জেবর আলীকে ফোন দিই। সেদিন ৪৭ মিনিট কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু না নির্বাচন করলে তিনিও করবেন না। সবাই যখন নমিনেশন তুলে নিলেন, জেবর তখন ফোন বন্ধ করে দিলেন। তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ছয়জন প্রার্থী মাঠে আছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল হোসেন নৌকা প্রতীক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেবর আলী মোটরসাইকেল প্রতীক, হরিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মোল্লা আনারস প্রতীক, জামায়াতে ইসলামীর নেতা প্রার্থী জালাল উদ্দিন চশমা প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ ঘোড়া প্রতীক ও আতিকুর রহমান চশমা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত নেতা জালাল উদ্দিনের উদ্দেশে আয়েন বলেন, ‘জামায়াত আল্লাহর কথা বলে, মানবতার কথা কখনো বলে না। যদি মানবতার কথাই বলত, আজ যিনি প্রার্থী আছেন, কেউ বলতে পারবেন না করোনার মধ্যে এক কেজি চাল দিয়েছেন কাউকে। কখনো তাঁরা উপকার করেন না। তাঁরা মিথ্যা প্রচারণায় বিশ্বাস করেন। এবার যদি জামায়াত ভোট চাইতে আসে, বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে। আর হরিয়ান ইউনিয়নে নৌকা প্রতিটি কেন্দ্রে বিজয়ী হবে।’

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে যেমন দুঃখ পেয়েছি, তেমনই খুশি হয়েছি। কারণ, অনেকে ৬০ বছর আওয়ামী লীগ করেও বেইমানি করেছেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।’

আওয়ামী লীগ করে নৌকার বিরোধিতাকারীরা মোনাফেক উল্লেখ করে আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘যাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেন, তাঁরা মোনাফেক। তাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে খান, আওয়ামী লীগকে দেন না। তাঁরা যত বড় নেতাই হোন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানের মতো লোকেরা আওয়ামী লীগকে কিছু দেন। বঙ্গবন্ধু যখন আওয়ামী লীগ করেন, তখন এখানে আওয়ামী লীগ ছিল না। কিন্তু তিনি দাওয়াত দিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করেছেন। মানুষকে দলে আসার সুযোগ দিতে হবে। শুধু দেখতে হবে, তিনি ভালো নাকি মন্দ।’

বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দুইজনকে বহিষ্কার

নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেবর আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মোল্লাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ায় ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দলীয় পদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে তাঁদের অপসারণ করা হলো।

জেবর আলী বলেন, তিনি শুনেছেন, তাঁকে দল থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন। এ বিষয়ে মাসুম মোল্লাকে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলার জন্য পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৭৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬, সাধারণ ওয়ার্ডে ৫১ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। ১৭ জুলাই ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সকাল ৮টা থেকে থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সীমানা জটিলতা কারণে এত দিন ভোট গ্রহণ হয়নি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে