তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার নাম ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ ভাস্কর্য

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩; সময়: ১২:০৬ অপরাহ্ণ |
তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার নাম ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ ভাস্কর্য

আদিবা বাসারাত তিমা : ‘আমি চলিয়াছি চির-নির্ভীক অবহেলি সবকিছু, নরমুণ্ডের ঢেলা ছড়াইয়া পশ্চাত-পথ পিছু। ভাঙিতেছি স্কুল ভাঙিতেছি সেতু ষ্টিমার জাহাজ লরি, খান-সৈন্যরা যেই পথে যায় আমি সে পথের অরি’।

কবি জসীম উদ্দীনের এই পংক্তিগুলোতে মুক্তিযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের এক অসীম সাহস ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

বাঙালির হাজার বছরের বঞ্চনার ইতিহাস, এক মুজিব, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। তারুণ্যের জয়-বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত বাংলার আকাশ বাতাস।

স্মৃতিমাখা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগের গল্প। আর এই আত্মত্যাগের অমীয় বাণী ও জাতির গৌরবোজ্জল স্মৃতি নিয়ে নির্মিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে “সাবাশ বাংলাদেশ” ভাস্কর্য।

সুকান্ত ভট্টাচার্য তার আঠারো বছর বয়স কবিতায় লিখেছেন, ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’। হ্যাঁ, এদেশের বুকে আঠারো নেমে এসেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলভেদকারী অগ্নিশিখা হয়ে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সেই ভয়াল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামালার প্রতিবাদে এ দেশের তরুণ যুবারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনীর উপর। জীবন বাজি রেখে তারা দেশকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়েছেন ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের সেই মহান বিজয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত । তারা সফল, তারা অমর। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে তাদের ওই আত্মত্যাগ।

তারুণ্যের এই দুঃসাহসের ইতিহাসকে চিরঅম্লান করে রাখতে ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয় স্বাধীনতার স্মারক ভাস্কর্য সাবাস বাংলাদেশ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবন চত্বরে শিল্পী নিতুন কুণ্ডের হাতে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্যটি। এর উদ্বোধন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মূল ভাস্কর্যে দেখা যায়, ৪০ বর্গফুট একটি বেদির ওপর খালি গায়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে দুই তরুণ।

তাদের একজনের দুইহাতে একটি রাইফেল। আরেকজনের এক হাতে রাইফেল আর এক হাত মাথার সামান্য উপরে মুষ্টিবদ্ধ, যা দৃঢ়প্রতিজ্ঞার প্রতীক। তারা সাধারণ গ্রামীণ তরুণদের প্রতীক, যারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য প্রাণপণে লড়ে গেছেন শত্রুদের সঙ্গে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনেক শিক্ষার্থী এই মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। মূলত ছাত্র যোদ্ধাদেরই প্রতীক এই ভাস্কর্যটির তরুণদ্বয়। এই তরুণদের ঠিক পেছনেই রয়েছে ৩৬ ফুট লম্বা একটা দেয়াল। দেয়ালটির অগ্রভাগে রয়েছে একটি বৃত্ত, যা স্বাধীনতা সূর্যের প্রতীক।

ভাস্কর্যটির দুইপাশে রয়েছে ৫×৬ বর্গফুট আয়তনের দুটি আয়তাকার দেয়াল। যার একটি দেয়ালে রয়েছে একজন বাউল তরুণ আর একজন বাউল তরুণী, যা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের প্রমাণ।

অপর দেয়ালটিতে খোদাই করা আছে মায়ের কোলে শিশু ও দুজন তরুণী, যাদের একজনের হাতে রয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা। আর সেই পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অল্প বয়সের এক কিশোর বালক।

আর ভাস্কর্যটির সামনে জ্বল জ্বল করছে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই অমর দুটি পঙক্তি, সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়; কবি যথার্থই বলেছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান এবং সবশেষ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যতগুলো সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে তার সবগুলোতেই এদেশের তরুণরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এ জাতি কখনো মাথা নোয়াবার নয়।

তারুণ্যের অসীম সাহসের প্রতীক কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাবাশ বাংলাদেশ কবিতার নামানুসারেই নাম করণ করা হয়েছে ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ ভাস্কর্যটি। যার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে বাঙ্গালী জাতির মুক্তিযুদ্ধকালীন তেজস্বী ভূমিকা।

বাঙ্গালির দৃঢ় মনোবল, মুক্তির প্রচন্ড স্পৃহা, সীমাহীন কষ্ট, অসীম ত্যাগের বিনিময়ে ভস্মাবশেষ থেকেই উদ্ভব হয়েছে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ডের।

বাঙ্গালী জাতির বীরত্বগাথাঁ ইতিহাসের স্মৃতি সাবাশ বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মকে অকতোভয় সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে গড়ে তুলবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে