এবার এক দফার কঠোর আন্দোলন নিয়ে ভাবছে বিএনপি

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩; সময়: ২:৫১ অপরাহ্ণ |
এবার এক দফার কঠোর আন্দোলন নিয়ে ভাবছে বিএনপি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ২০১৫ সালে হরতাল অবরোধের কঠোর কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বিএনপি দুর্বল ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের সাদামাটা কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব হবে না- এমন বিষয় উপলব্ধি করছে দলটি। সঙ্গত কারণে এবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।

তবে এখনই হরতাল-অবরোধ নয়, অবস্থান এবং ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে জোরেশোরে। আর চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক সব শক্তি কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চূড়ান্ত আন্দোলনের কৌশল ঠিক করতে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে আন্দোলনের ধরন, গতি-প্রকৃতির বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ও ১২ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের ধরনের বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রগুলো জানায়, নিরীহ গোছের আন্দোলন থেকে বেরিয়ে এসে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে বেশিরভাগ নেতা গুরুত্বারোপ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সফলতার জন্য আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন আনার বিষয়ে একমত হন। সে ক্ষেত্রে আপাতত অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচিতে যাওয়ার বিষয় বিবেচনায় আনা হয়।

বিএনপি সূত্রমতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে দলে। এগুলো হচ্ছে, মাঠের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও তদারকি এবং কূটনৈতিক বিষয় দেখভালের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা। তবে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এবং মিত্রদের সমর্থনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রাজপথের নিজস্ব শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি। এজন্য একজন নেতাকর্মীও যাতে নিষ্ক্রিয় না থাকে সে দিকটা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

সূত্রমতে, আন্দোলন সফল করতে সাংগঠনিক সব শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে যে যেখানে আছে সবার কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, নিষ্ক্রিয় থাকার দিন শেষ, সক্রিয় হতে হবে সবাইকে। এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগে এরই মধ্যে সব অঙ্গ-সহযোগী ও সমর্থিত সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি দিয়ে সবাইকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক দফার আন্দোলনের দিনক্ষণের বিষয়ে বুধবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করব। একটা কথা নিশ্চিত এবারের যে আন্দোলন হবে সেটা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের সমস্ত মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।’

জানা গেছে, চলতি মাসেই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এখন অঙ্গ সংগঠনগুলোকে মাঠে নামানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হচ্ছে। এছাড়া অন্য পাঁচটি সংগঠনের উদ্যোগে ছয় জেলায় ‘মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলোর সক্ষমতা যাচাই করছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। যাতে সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা থাকলে তা কাটিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে কাজে লাগানো যায়।

আন্দোলন ঘিরে সাংগঠনিক তৎপরতার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও খ্যাতিমান শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে তারুণ্যের সমাবেশের পাশাপাশি শ্রমিক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও জাসাসের যৌথ উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।’

বিএনপির ১১টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে অতীতে এই তিনটি সংগঠনই রাজপথে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। তাই আগামীতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনেও দলের প্রধান তিন এই অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন অর্থাৎ তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। তাই সারাদেশে আয়োজন করছে অঞ্চলভিত্তিক ‘তারুণ্যের সমাবেশ’।

গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম দিয়ে বিএনপির এ ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হয়। এরপর ১৯ জুন বগুড়া এবং ২৪ জুন বরিশালে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করছে আন্দোলনরত বিএনপি।

দলটির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে যেসব সমাবেশ হয়েছে তাতে দেশের তরুণ-যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। বাকি সমাবেশগুলোতেও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে। সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের মাঠে নামিয়ে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে চান তারা।

তারুণ্যের এই সমাবেশ সফলে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সারাদেশ ছুটে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে, তারুণ্যের সমাবেশের মধ্যেই দেশের ছয় বড় শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’। বিএনপির পাঁচ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও জাসাসের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রথমে চারটি সংগঠনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও পরে জাসাসকে যুক্ত করা হয়েছে। স্বল্পআয়ের মানুষের দুর্দিন, দুর্নীতি-শোষণ-নির্যাতনের প্রতিবাদে পদযাত্রার এই কর্মসূচি পালিত হবে।

‘শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের’ লক্ষে আগামী ১৪ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর দিনাজপুরে ১৯ জুলাই, রাজশাহীতে ২৮ জুলাই, যশোরে ৫ আগস্ট, হবিগঞ্জে ১২ আগস্ট এবং বরিশালে ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এই পদযাত্রা। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষকে ব্যাপকহারে সম্পৃক্ত করাতে চায় বিএনপি। উদ্দেশ্য, বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনেও যাতে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তায় নামে।

জানা গেছে, পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেনকে সমন্বয়ক করে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে পাঁচ সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে কৃষক দল বড় শোডাউনের প্রস্তুুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে কর্মসূটি সফলে ছয় বিভাগে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে টিম করে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফলে অন্য চার সংগঠনও বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করছে। প্রতিটি কর্মসূচিকে ঘিরে সমন্বয় কমিটি করছে তাঁতী দল। নোয়াখালীর পদযাত্রা সফলে ইতোমধ্যে সমন্বয় কমিটি করেছে সংগঠনটি।

১৫ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রার কর্মসূচি থাকলেও তা একদিন এগিয়ে আনা হয়েছে। কর্মসূচিতে নোয়াখালী ছাড়াও লক্ষ্ণীপুর, ফেনী, কুমিলস্না উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং মহানগর, চাঁদপুর জেলার পাঁচ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। কর্মসূচি সফলে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে অন্য অঙ্গ-সংগঠনের মতো তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদও সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘দেশ ও মানুষ বাঁচাতে এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মেহনতি মানুষের পদযাত্রা সফল করতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথমে চারটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও পরে জাসাসকে সংযুক্ত করা হয়েছে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে