স্নিগ্ধ ও শুভ্রতায় মোড়া বেলি
ইন্দ্রাণী সান্যাল : সুগন্ধি ফুল হিসেবে পৃথিবীজুড়েই বেলির খুব কদর। যুগে যুগে কবিদের কবিতায় বেলি ফুলের বন্দনা দেখেছি আমরা।
নিজের বারান্দা বা ছাদবাগানে দু-একটি বেলি ফুলের গাছ ঝুম বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে গাছ ঝেপে আসা বেলি ফুলের সমারোহ সারা দিনের ক্লান্তি ঘুচিয়ে দেবে, নিশ্চিত হয়ে বলা যায়।
বেলির আবেদন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এর মনমাতানো সুগন্ধে ভরে থাকে চারপাশ। সাদার শুভ্রতায় ফুরফুরে হয়ে ওঠে মন।
বছরের এ সময়টাতে এর থেকে ভালো উপহার আর কীই-বা হতে পারে! আমাদের দেশি বেলিও কিন্তু সুঘ্রাণে সেরা আর বেশিসংখ্যক ফোটে, রীতিমতো সাদা তারার মেলা বসে, আকৃতিতে খানিকটা ছোট হলেও গাছভরা ফুল আর ঘ্রাণ সত্যিই বিমুগ্ধ করে।
এখনই উপযুক্ত সময় বেলি ফুল লাগানোর, তবেই বর্ষায় ঝিকিমিকি তারার মতো ফুটে থাকবে বেলি ফুলগুলো। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ
বাংলদেশে বেলি ফুলের কদর যেন সর্বত্র। এর মন মাতানো ম ম গন্ধে প্রেমিক হৃদয়ে ফেলে দারুণ সাড়া। সাদা রঙের তীব্র সুগন্ধযুক্ত, মালা গাঁথার উপযোগী বিশেষ এই ফুল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সুপরিচিত।
অর্থকরী ফুলের দিক দিয়ে বেলির স্থান এখনও শীর্ষে। বেলি বা বেলী যেভাবেই লিখি না কেন, এর ইংরেজি নাম কিন্তু Arabian jasmine. আর বৈজ্ঞানিক নাম হল Jasminum sambac. জেসমিন গণের বিশেষ এই সুগন্ধী ফুলটির গাছের উচ্চতা প্রায় এক মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো একটু বাড়তিও হয়। বেলি ফুল মূলত সন্ধ্যায় ফোটে এবং পরদিন দুপুরে ঝরে যায়।
আমাদের দেশে বাগানিরা সাধারণত চার থেকে পাঁচ ধরনের বেলিগাছ লাগিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রাই বেলির কদর সবচেয়ে বেশি।
এই রাই বেলি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বেশ বড় আকৃতির, অসংখ্য পাপড়ি আর সবচেয়ে বেশি সুঘ্রাণযুক্ত। বেলির আরও একটি প্রজাতি হলো লতা বেলি।
বারান্দার গ্রিলে বেয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে দেওয়া গেলে ফুলে-পাতায় বারান্দার আদলই বদলে যাবে, ক্ষণে ক্ষণে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে, চোখে–মনে থাকবে তৃপ্তির আবেশ। এছাড়া আরও দু-তিন রকমের বেলি আমাদের দেশে বেশ সমাদৃত।
রাজশাহীর ফুল বিক্রেতারা জানান, এখন বেলি ফুলের খুব চাহিদা। বাজারে আসার আগে থেকে মানুষ খোঁজ করে। অনেক সময় পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে তারা আনতে শুরু করেন।
ক্রেতার বয়সের কোনো ভেদাভেদ নেই। তরুণীরা ছাড়াও মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধরাও আসেন। এখানেই তো মেয়েরা ফুল হাতে পেঁচিয়ে পরেন। কেউ সঙ্গে সঙ্গে খোঁপায় দেন। অনেকে গাড়ির মধ্যে ফুল ঝুলিয়ে রাখেন। প্রাকৃতিক সুগন্ধি হিসেবে কাজ করে।
শহুরে জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে বেলি। ঘর সাজাতেও এ সময় বেলির চাহিদা দেখা যায়। শোপিস রাখার স্ট্যান্ডে সাজিয়ে রাখা যেতে পারে। বাটির মতো স্বচ্ছ কোনো ফুলদানিতে রাখলেও ভিন্নতা আসবে।
এসময়ের যেকোনো অনুষ্ঠান সাজাতে বা অভ্যর্থনা জানাতে বেলি ফুল বেছে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন, তাদের জন্য তো বেলি লাগবেই। এই ফুল ছাড়া যেন কিছুই সম্পন্ন হয় না। বিয়ের গাড়ি, মঞ্চ, বউসাজ থেকে শুরু করে সবেই বেলিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সকালে ফুলোগুলো খানিকটা ডালসহ কেটে ফুলদানিতে পানি দিয়ে রাখলে সারা দিন ঘরে থাকবে শান্তির পরশ। আর যদি কিছু ফুল ডাল ছাড়া তুলে একটি স্বচ্ছ কাচের বাটিতে পানিতে ভাসিয়ে রাখা যায়, তাহলেও মন থাকবে ফুরফুরে।