রাজশাহীতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও বেতন-ভাতা তুলছেন ৫ শিক্ষক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৩; সময়: ১২:১১ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও বেতন-ভাতা তুলছেন ৫ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও রাজশাহীর গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ৫ শিক্ষক যথারীতি সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ফৌজদারি মামলার চার্জ গঠন হলে অভিযুক্তরা সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা।

তবে গোদাগাড়ীর ৫ শিক্ষক অভিযুক্ত হয়েও কলেজে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, যথারীতি ভেতন ভাতাও ভোগ করছেন। এ নিয়ে কলেজ শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক, মাইনুল ইসলাম, ফারুক হোসেন শহিদুল ইসলাম ও হান্নান আলী। এরা এ কলেজের প্রদর্শক ও শিক্ষক পদে কর্মরত। তাদের বিরুদ্ধে গত ৩১ মে রাজশাহীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজি, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, অঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট কলেজে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধূরীর উপস্থিতিতে তৎকালিন অধ্যক্ষ আবদুর রহমানের কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধূরী কলেজের বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে টাকা পয়সার হিসাবের কৈফিয়ত তলব করেন।

এ নিয়ে কলেজে অধ্যক্ষ আবদুল রহমানের সঙ্গে বাকবিতন্ডর এক পর্যায়ে কলেজের একদল শিক্ষক হামলা চালায়। এতে অধ্যক্ষ গুরুতর আহত হন। এরপর প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় চিকিৎসা নেন। এর আগে তাকে কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নিয়ম অনুসরণ না করেই।

পরে সুস্থ হয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান গোদাগাড়ী থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। প্রথমে এ মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় গোদাগাড়ী থানা পুলিশকে। তবে তদন্ত করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ আদালতে ফাইনার রিপোর্ট দাখিল করেন। এ মামলা থেকে সবাইকে অব্যহতি দেন।

তবে বাদী আবদুর রহমান আদালতে নারাজি পিটিশন দিলে পরে এ মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ইনভেস্টিগেন ব্যুারো (পিবিআই) রাজশাহীকে। এরপর পিবিআই নিযুক্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম যথাযথ এ মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি তদন্ত শেষে গত ৩১ মে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চাজশীট দাখিল করেন। আদালত চার্জ গঠন করেন। মামলাটি এখন বিচারিক পর্যায়ে থাকলেও অভিযুক্তরা নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। তবে এ মামলার অপর ৬ জনের বিরুদ্ধেও পরে জজ আদালতে রিভিশন পিটিশন দেওয়া হয়।

মামলার বাদী একই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুর রহমান জানান, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা যদি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন, তাহলে তাদের সাসপেন্ডের বিধান রয়েছে এবং বেতনভাতা বন্ধ থাকার কথা। তবে গোদাগাড়ী কলেজের ক্ষেত্রে রহস্যজনক কারণে এখনো এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। তাই অভিযুক্ত হয়েও তারা নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করছেন। এটা বিধিসম্মত নয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক ফৌজদারি মামলার আসামী থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, কর্তপক্ষ চাইলে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাসপেন্ড কিংবা বেতন ভাতা বন্ধ করতে পারেন। তবে সবকিছু নির্ভর করে অভিযুক্তদের আচরনের উপর।

তিনি বলেন, এখন তিনি ও তার অপর সহকর্মীরা কলেজ করছেন। বেতনভাতাও তুলছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ তারা পান নি। তাই নিয়ম মাফিক তারা কলেজ করছেন, ভেতনভাতা উত্তোলন করছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে