আফগানদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ বাংলাদেশের
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বল হাতে আফগানিস্তানকে ধরাশায়ী করার পর ব্যাট হাতেও দারুণ নৈপুণ্যে দেখিয়েছে টাইগাররা। শেষ টি-টোয়েন্টিতে রশিদ খানের দল বধ হয়েছে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে তারা হেরেছিল ২ উইকেটে। তাতে ২-০ ব্যবধানে আফগানদের বিপক্ষে এ সংস্করণে প্রথমবার সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার (১৬ জুলাই) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রান সংগ্রহ করে আফগানরা। ডিএলএস পদ্ধতিতে টাইগারদের টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ১১৯ রান। কারণ ৭.২ ওভারের পর ম্যাচে বৃষ্টি হানা দিলে দেড় ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। এরপর ৩ ওভার কমিয়ে খেলা ১৭ ওভার নির্ধারণ করা হয়। ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অবশ্য জয় তুলে নেয় ৫ বল হাতে রেখেই।
এদিন রান তাড়ায় নেমে ওপেনিং জুটিতে দুর্দান্ত শুরু পায় টাইগাররা। আফিফ হোসেনের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি গড়ে মুজিব উর রহমানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। তাতে অবশ্য কৃতিত্ব আছে কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার রশিদ খানের। বাজপাখির মতো উড়ে একহাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন আফগান অধিনায়ক। ৬ চারের মারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন লিটন। তার বিদায়ের পর ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি আফিফও।
মুজিবকে স্লগ সুইপে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে করিম জানাতের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ২ ছক্কায় ২০ বলে ২৪ রান করেন আফিফ। ইনিংসের দশম ওভারে আক্রমণে এসে ৩ বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা টাইগারদের কিছুটা টেনে ধরেন মুজিব।
দলীয় ৭৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। ৬ বলে মাত্র ৪ রান করে তিনি আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে বোল্ড হন তিনি। আগের ম্যাচে ১২ বলে ১৪ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে। আর ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে করেছিলেন মাত্র ২৪ রান।
লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জয়টা নিশ্চিত করতে পারতো চতুর্থ উইকেট জুটিতেই। তবে আগের ম্যাচের নায়ক তাওহিদ হৃদয় আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন। সাকিবের সঙ্গে ভাঙে তার ৩১ রানের জুটি। হৃদয় ১ ছক্কা ও ১ চারে ১৭ বলে ১৯ রান করে মাঠ ছাড়েন। সাকিব বাকি কাজটা সেরে নেন শামিম হোসেনকে নিয়ে। ১ ছক্কা ও ১ চারে ১১ বলে ১৮ করে সাকিব ও ৭ বলে ৭ রান করে শামিম অপরাজিত থাকেন। আফগান বোলারদের মধ্যে মুজিব ও ওমরজাই ২টি করে উইকেট নেন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে ২০১৮ সালে। সেবার হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবেছিল টাইগাররা। এরপর ২০১৯ ও ২০২২ সালে আরও দুটি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। কিন্তু উভয় সিরিজই শেষ হয় সমতায়। অবশেষে ২০২৩ সালে এসে রশিদদের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে জয়টা ছিল ২ উইকেটের ব্যবধানে।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। আক্রমণে এসে নিজের প্রথম দুই ওভারে দুই আফগান ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ইনিংস শুরুর পঞ্চম বলে তাসকিনের শর্ট লেংথের বল ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে খেলতে গিয়ে ওপরে তুলে দেন গুরবাজ। এগিয়ে গিয়ে তাসকিন নিজেই তালুবন্দি করে নেন বল। ৫ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ।
এরপর তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে তাসকিনের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হযরতউল্লাহ জাজাই। মাত্র ১৬ রানেই ২ উইকেট হারায় আফগানরা। এরপর ক্রিজে এসে দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ নবি ও ইব্রাহিম জাদরান। কিন্তু তাদের জুটিতে আসেনি ৩২ রানের বেশি। মাঝে বৃষ্টির বাধায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ ছিল ম্যাচ। ওভার কমে আসায় হাত খুলে ব্যাট চালানোর চেষ্টা করেন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু টাইগার বোলারদের তোপে তারা ক্রিজে টিকতে পারেননি। ইনিংসের দশম ওভারে আক্রমণে এসে মুস্তাফিজের স্লোয়ারে কট-বিহাইন্ড হন নবি।
আগের ওভারে নাসুমের বলে সাকিব ও লিটনের হাতে জীবন পাওয়া এ ব্যাটার থামে ২২ বলে ১৬ রান করে। পরের ওভারে আক্রমণে আসা সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে আফিফের হাতে ধরা পড়েন ইব্রাহিম। ২৭ বলে ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ওভারের প্রথম বলে ইব্রাহিমকে আউট করার পর শেষ বলে সাকিব বোল্ড করেন ক্রিজে আসা নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। তিনি ৩ বলে ৫ রান করেন। দলীয় ৬৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় আফগানরা।
ষষ্ঠ উইকেটে অবশ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও করিম জানাত মিলে ২৯ বলে ৪২ রান এনে দেন দলকে। ওমরজাই ২১ বলে ২৫ ও করিম ১৫ বলে ২০ রান করে আউট হন। শেষদিকে রশিদ খান এসে ৩ বল মোকাবিলায় একটি বিশাল ছক্কা হাঁকান। তাতে তাদের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১১৭ রান। টাইগার বোলারদের মধ্যে তাসকিন ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তুলে নেন। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব ও মুস্তাফিজুর।