গোদাগাড়ীর ৪ খুনের নাটের গুরু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩; সময়: ৩:২৯ অপরাহ্ণ |
গোদাগাড়ীর ৪ খুনের নাটের গুরু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জমি দখল কেন্দ্র করে হামলায় চারজন নিহতের ঘটনার মুলহোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তাদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাদের মামলায় অন্তর্ভূক্ত করাসহ গ্রেপ্তার নিয়েও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিহতদের পরিবারের দাবি, ওই জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টিসহ দখল ও প্রতিপক্ষের উপর বার বার হামলার মূলহোতা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে থানায় দায়ের করা মামলায় তার নাম আসেনি। নিহতের পরিবার থেকে তার নাম বলা হলেও পুলিশ এজাহারে অন্তভূক্ত করেনি।

ফলে নিহত মেহের আলীর ছেলে সেতাফুর রহমান বাদি হয়ে আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনকে হামলার মূলহোতা উল্লেখ করে ১নং আসামী করা হয়েছে। গত ১৭ জুলাই আদালতে দায়ের করা এ মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। তবে এ মামলার বিষয়ে আদালত এখনো কোন আদেশ দেয়নি।

এছাড়াও ভূমিদস্যু ইউপি চেয়ারম্যানের দখলবাজির প্রধান সহযোগি সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন এবং তার দুর্ধর্ষ ক্যাডার কামাল হোসেন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকেও গ্রেপ্তারে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা নেই। এ সুযোগে হামলা ও খুনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এলাকায় ফিরে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ নিহতের পরিবারের সদস্যদের।

নিহত মেহের আলীর ছেলে সেতাফুর রহমান বলেন, চার মার্ডারের ঘটনার মুলহোতা ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন এখানো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু ওই জমি দখল নিতে তার নির্দেশে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত বছর তিনটি হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি মামলায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চার্জসীট হয় এবং হাজতও খাটে। পরে জামিনে এসে আরও বেপরয়া হয়ে উঠেছেন। যার ফলে এই চার মার্ডারের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চার্জসীট ও আটক হওয়ার পর তাকে বরখাস্ত করতে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। চেয়ারম্যানের হামলা ও নির্যাতনের শিকার পাকড়ি ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি আজাহার আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাঠায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে যায়। সে সময় ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করলে আমার বাবাসহ চারজন খুন হতো না।

সেতাফুর আরও বলেন, জমি দখল করতে হামলায় জড়িতরা ভূমিদস্যু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের ক্যাডার বাহিনী। চেয়ারম্যান পুলিশকে ম্যানেজ করে মামলায় অনেকের নাম দিতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।

এ বিষয় জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে শুনেছি। তবে চার খুনের ঘটনার সাতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।

গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, চার খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা আত্মগোপনে আছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ১০ জুলাই গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়নের ইয়াজপুর গ্রামে জমি দখল কেন্দ্র করে হামলায় চারজন নিহত হন। এরা হলেন, জমির মালিক সোহেল রানা ছোটন (৪৫), তার বর্গাচাষি নাইমুল ইসলাম (৮০), তাঁর ভাই মেহের আলী (৭০) ও মো. মনিরুল (৪৫)। এ ঘটনায় ওই রাতে ছোটনের ভাই বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয় ৭১ জনকে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইয়াজপুর গ্রামে হাজি মানিকউল্লা শেখের ছিল প্রায় ৩৯৯ বিঘা জমি। এসব জমি এখন হাজি মানিকউল্লা শেখ ওয়াক্ফ এস্টেটের। এর মোতোয়ালি হিসেবে সবকিছু দেখাশোনা করেন মানিকউল্লা শেখের নাতি আশিকুর রহমান চাঁদ। এই জমি লিজ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা চাষ-আবাদ করে আসছিল। তবে চেয়ারম্যান হওয়ার পর জালাল উদ্দিন ওই জমিগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে মাঠে নামে। এর পর শুরু হয় হামলা, মামলা ও দখলবাঁজি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে