রাজশাহীতে বৃষ্টিহীন শ্রাবণে চৈত্রের খরা

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩; সময়: ১১:১৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে বৃষ্টিহীন শ্রাবণে চৈত্রের খরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল আষাঢ়ে কাঙ্খিত বৃষ্টি মেলে নি রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। শ্রাবণে এসেও বৃষ্টির দেখা নেই। পহেলা শ্রাবণে এক পশলা বৃষ্টির পর কদিন ধরে আবারো রুক্ষ আবহাওয়া। টানা রোদ্রজ্জল অবস্থায় এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে এ অঞ্চলে রোপিত আমনের ক্ষেত। মাঠে পাট কাটার উপযোগী হলেও জাগ দেওয়ার পানির অভাবে পাট কাটার সাহস পাচ্ছে না কৃষক। এসব নিয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে বরেন্দ্রের কৃষক।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুবছর ধরে পাদের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার রাজশাহীতে বেড়েছে পাটের চাষ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় পাট চাষ বেড়েছে ৪৪২ হেক্টর জমিতে। তবে এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা। একই অবস্থা আমন ধান চাষের ক্ষেত্রেও। অনাবৃষ্টির কারণে পাট ও ধান নিয়ে উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, এখনও পাট কাটা শুরু হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে। তবে গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবছর চাষের পরিমাণ বেড়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলায় পাট চাষ হয়েছিলো ১৯ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। এবছর রাজশাহী জেলায় পাটের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার সবচেয়ে বেশী পবায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। মাঠে মাঠে এখন পাট কাটার উপযোগী হয়েচে। তবে জাগ দেওয়ার মত পানি না থাকায় এখনো পাট কাটার সাহস পাচ্ছেন না কৃষক।

জেলার পবা উপজেলার পাটচাষি হাসমত উল্লাহ বলেন, গত বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করছিলেন। বিক্রি করে ভালো দামও পেয়েছিলাম। তাই এবছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। এখনও পাট কাটা শুরু করিনি। কারণ পাট জাগ দেওয়ার মত পানি নেই।

তিনি আরও বলেন, পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। পাট কাটারও সময় হয়েছে। অনেকেই পাট কেটেছে। কিন্তু খালবিলে পানি নেই। তাই অনেকেই পাট কাটতে পারছে না।

রবিউল ইসলাম নামের আরেক পাটচাষি জানান, তার জমিতে পাট আছে। পাট কেটে সেই জমিতে ধান লাগাবেন তিনি। এদিকে বীজ তলায় চারা প্রস্তুত। কিন্তু পানির অভাবে পাট কাটাতে পারছেন না। একই কারণে ধানও লাগাতে পারছেন না। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন তিনি। তার বাড়ির পাশের খালে পানি থাকলেও পাট জাক দেওয়ার মতো পানি জমে নেই বলে জানান তিনি।

স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে পুকুর, খালে পানি নেই। তাই পাট কাটতে পারছেন না কৃষকরা। তবে নীচু এলাকাগুলোর পাটের জমিতে পানি জমেছে। সেগুলো কেটে সেখানেই জাগ দিচ্ছেন অনেকে।

তিনি আরও জানান, কয়েক বছর থেকে পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষীরা। গত বছর অনেক চাষি মৌসুমের শেষে পাট বিক্রি করেন। ফলে তুলনামূলক ভালো দাম পেয়েছেন। রাজশাহীতে সরকারি পাটকল বন্ধ থাকলেও বেসরকারি বেশ কয়েকটি পাটকল রয়েছে। এই পাটকলগুলোর প্রতিনিধিরা পাট কিনে থাকেন। এছাড়া বেশির ভাগ পাট রাজশাহীর বাইরে চলে যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গত বছরের চেয়ে পাট চাষ বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এখনও রাজশাহীতে সেইভাবে পাট কাটা শুরু হয়নি। আশা করা হচ্ছে বৃষ্টিপাত হওয়া সাপেক্ষ আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে ধীর গতিতে চলছে আমনের চাষাবাদ। অনেকের রোপিত জমি শুকিয়ে গেছে। ধান ও পাট চাষিরা এখন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হলে একদিকে কাটা পড়বে পাট অন্যদিকে লাগানো হবে আমন ধান।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, এখন বর্ষা মৌসুম। ইতিমধ্যে আষাঢ় মাস শেষ প্রান্তে। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়নি। এই বছর তুলনামূলক রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এখন শ্রাবণ ছলছে। বৃষ্টিপাতের সময় এখন আছে। তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে চলতি শ্রাবণে এবার কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে