৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বিএনপির টানা কর্মসূচি

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩; সময়: ১০:১০ পূর্বাহ্ণ |
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বিএনপির টানা কর্মসূচি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে আগামী ২৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে দাবি মানতে সরকারকে দুই দিনের (৪৮ ঘণ্টা) আলটিমেটাম দিতে যাচ্ছে দলটি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া না গেলে আগামী ৩০ জুলাই, রোববার থেকে ঢাকায় টানা কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা।

এ কর্মসূচির মধ্যে থাকবে বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবস্থান। আগস্টের ১০ তারিখ পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলতে পারে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকায় একাধিক স্থানে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। বিএনপি ও শরিকদের মধ্যে আলোচনায় এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের আচরণসহ সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাসমাবেশের আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে একদফার কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখবে বিএনপি ও শরিকরা। এ সময়ের মধ্যেও ক্ষমতাসীনরা সাড়া না দিলে ২০ আগস্ট থেকে ফের লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি। সূত্র বলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে ঢাকায় ঘেরাওয়ের সঙ্গে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাইবে দলটি। সে লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন করা হয়েছে, প্রতিটি শান্তিপূর্ণ ছিল। একদফার আন্দোলন ঘিরে আমাদের দুজন লোক নিহত হয়েছেন, ৯ হাজার মিথ্যা মামলা করেছেন, তার পরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামীতেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলনে নামে বিএনপি। এরপর গত ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দীতে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ওইদিন যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে সমাবেশ করবে।

এদিকে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে গতকাল সোমবার পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। ডিএমপি কমিশনার বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লিখিত দুটি স্থানের যে কোনো একটিতে মহাসমাবেশ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে দলটি।

অন্যদিকে ঢাকার এ মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের মাধ্যমে একদফা আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় মিটিং করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এর অংশ হিসেবে সোমবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি, কেন্দ্রীয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে গত রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন মির্জা ফখরুল। এ ছাড়া মহাসমাবেশ সফলে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, পার্শ্ববর্তী সব জেলাসহ দলের সব ইউনিট থেকে নেতাকর্মীদের আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে ঢাকায় এ মহাসমাবেশ ডেকেছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে একদফার আন্দোলনকে তারা একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চান। গত ১৮ জুলাই প্রথম দিনের পদযাত্রার কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ হয়। লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ওই দুই দিনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি বিএনপির। হামলা-মামলা,

অত্যাচার-নির্যাতন বৃদ্ধির এমন প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকে দ্রুততম সময়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।

যদিও পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, একদফার আন্দোলনের শুরুটা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। নেতাকর্মীরা সাহস নিয়ে মাঠে নেমেছেন। হামলা, গুলির পরও কেউ মাঠ ছাড়েননি; বরং মাঠে থেকে লড়াই করেছেন—এ বিষয়টি নেতাদের শক্ত কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ জোগাচ্ছে।

বিএনপি তাদের শরিকদের সঙ্গে একদফার নতুন কর্মসূচি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা করেছে। সেখানে দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার বিষয়টি এসেছে। নেতারা মতামত দিয়েছেন, দাবি মানতে মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে কিছুটা সময় দেওয়া দরকার। সরকার ওই সময়ের মধ্যে সাড়া দিলে ভালো, অন্যথায় তখন দাবি আদায়ে টানা কর্মসূচিতে যেতে হবে। শরিকদের সঙ্গে মিটিংয়ে এ ধরনের মতামত উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও একই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের রাস্তা খুলে দিতে হবে। এজন্য মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। কিন্তু সরকার যদি সেটা না করে, তাহলে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনে যাব।

এরপর বিরোধী দলের জন্য রাজপথে থাকা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তিনি আরও বলেন, মহাসমাবেশের দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় দাবি মেনে নিতে সরকারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা নিশ্চয় থাকবে। যাতে ওই সময়ের মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে—কখন, কীভাবে পদত্যাগ করবে এবং আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কীভাবে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বিএনপি মহাসমাবেশ ডেকেছে। আমরা সমাবেশ ডেকেছি। আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য। এখন আমাদের দাবি না মেনে সরকার যদি দমনপীড়নের ভেতর দিয়ে এ দাবি থেকে জনগণকে সরিয়ে আনতে চায়, তাহলে তারা (সরকার) যে ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সেটিকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, সে ধরনের কর্মসূচি নিতে আমরা বাধ্য হব। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমাদের আন্দোলন থামবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে