সরকার পরিস্থিতি সংঘাতময় করার চেষ্টা করছে : জামায়াত

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৩; সময়: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ |
সরকার পরিস্থিতি সংঘাতময় করার চেষ্টা করছে : জামায়াত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশ জাময়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার কাউকে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিল করতে দিচ্ছে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের দিন সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হল দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার তার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে আরেকটি নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দিচ্ছে না।’

বুধবার (২ আগস্ট) সকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ষড়যন্ত্রে বিভোর।

এ জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাত ৯টা পর্যন্ত সাক্ষীগ্রহণ করা হয়েছে। সরকার তার দলীয় লোকদের দ্বারা নানা অপপ্রচার চালিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলাটির বিষয়ে এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির অবতারণা করছে।

সরকারের কোনো কোনো ব্যক্তি এবং ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেউ কেউ এমন ভাষায় কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তারাই যেন নিবন্ধন বাতিলের কর্তৃপক্ষ বনে গেছেন। সরকারের এসব আচরণ থেকে বোঝা যায়, সরকার জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে বাইরে রাখার অপকৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সংবিধানের দ্বারা। সংবিধান জনগণের নিরাপত্তা ও অধিকারের বিষয়ে যে নিশ্চয়তা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব হচ্ছে প্রশাসনের। বাংলাদেশের সংবিধানে যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হলো- ব্যক্তির অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা, সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা, সংঘ-সমিতি করার স্বাধীনতা, চিন্তা, বিচার-বুদ্ধি ও বাকস্বাধীনতা, পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দল। সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব থাকা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের বিজয় প্রমাণ করে যে, জামায়াত দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে এবং জামায়াতকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার অপকৌশল হিসেবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতের নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ করে কিছু অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রিট দায়ের করেন।

উচ্চ আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনটি আইন সম্মত হয়নি বলে রায় প্রদান করেন। উক্ত রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের ৩৮, ৩৯ এবং ৪১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন।’

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জামায়াত সব সময়ই শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে অভ্যস্ত। জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। এ অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলকে এ অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, জামায়াতকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে জামায়াতের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিগত ১৫ বছর যাবত জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে এ সরকার।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকারের ব্যাপারে নিবন্ধিত/অনিবন্ধিত বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশ করার অধিকার রাখে। বাংলাদেশে বহু অনিবন্ধিত দল সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু জামায়াত অতীতের প্রায় প্রত্যেকটি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল হওয়া সত্ত্বেও সমাবেশ করার সহায়তা পাচ্ছে না। এটা জামায়াতের প্রতি চরম অবিচার। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে আচরণ করছে, জামায়াতের সঙ্গে তার বিপরীত আচরণ করছে।’

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে সারা দেশে জামায়াতের ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে নাজেহাল করছে। কোনো কোনো এলাকায় পুরুষ নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনি ও মানবাধিকার পরিপন্থি। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের সেবক। তাদের কোনো দলের পক্ষে নয় বরং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা না হলে দেশে আইনের শাসন বিঘ্নিত হবে এবং দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরও ব্যাপক রূপ লাভ করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে