গোদাগাড়ীর সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ফাইল বন্দি

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩; সময়: ২:৩৯ অপরাহ্ণ |
গোদাগাড়ীর সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ফাইল বন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চার জন হত্যা ঘটনার অন্যতম মূলহোতা ও অপর একটি মামলার আবেদনের প্রধান আসামী পাকড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত এক বছর পার হয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

দিনের পর দিন ইউএনও অফিসে ধরনা দিলেও অজ্ঞাত কারনে ফাইলেই আটকে আছে সেই তদন্ত আবেদন। ভূক্তভোগীরা বলছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নিকট ২০২২ সালের ৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে মামলার প্রমাণাদিসহ তাকে বরখাস্তের আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করে। এই নির্দেশ এক বছর হয়ে গেলেও এখনো সেই তদন্তের মুখ দেখেনি।

আমরা বারবার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলমের কাছে যোগাযোগ করলে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিবো বলে আশ্বাস প্রদান করলেও তদন্ত কাজ শেষ না করেই বদলি হয়ে চলে যান। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জয় কুমার মহন্ত যোগদার করার পরও একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনিও আশ্বাস প্রদান করেছেন দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার। তবে তদন্ত কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় ভূক্তভোগীরা শঙ্কায় রয়েছে আদৌতে তদন্ত করবেন নাকি অজ্ঞাত কারনে ধামাচাপাই পড়ে থাকবে।

চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের বরখান্তের আবেদনকারী পাকড়ীর মোশড়াপাড়া গ্রামের আজাহার আলী লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, পাকড়ী ইউ.পি. চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন একজন মাতাল এবং সন্ত্রাসী।

আমি পাকড়ী ইউনিয়নের হাজী মানিকুল্লাহ্ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী আসিকুল ইসলাম চাঁদের নিকট থেকে এস্টেটের ৫১ বিঘা সম্পত্তি লিজ গ্রহন করি এবং তার সঙ্গে আমার ৫ বছর এর জন্য লিজ চুক্তি সম্পাদিত হয়।

এক বছরের লিজ মানি বাবদ ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা প্রদান করি অতঃপর তিনি পাকড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর সহযোগিতায় সম্পত্তি থেকে বেদখল করার চেষ্টা করলে আমি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহীনির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট রাজশাহী আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করি। যার নং-৭৪১ পি/২২ (গোদাগাড়ি)।

মামলায় বিজ্ঞ আদালত প্রতিপক্ষগনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা মোতাবেক আদেশ প্রদান করেন। বিষয়টি চেয়্যারম্যান অবহিত হওয়ার পর তিনি তার সন্ত্রাসী বাহীনিকে লিজকৃত সম্পত্তি জোর পূর্বক দখলের জন্য প্রকাশ্য হুকুম দিলে তারা সম্পত্তিতে লাঠি-লাদনা নিয়ে নেমে পড়ে এবং জমিতে কর্মরত আমার পক্ষের কামলাদেরকে লাঠি-লাদনা, হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে ফলে তারা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।

অতঃপর আমি চেয়্যারম্যানকেসহ তার সন্ত্রাসী বাহীনি লোকনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আমলী আদালতে মামলা করি। মামলাটি এজাহার হিসাবে গন্য করার জন্য গোদাগাড়ী থানাকে নির্দেশ দেয় যার নম্বর-৪২ তারিখ- ২২/০২/২০২২ ইং।

চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারী আদালতে আত্মসমার্পন করে জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন প্রার্থনা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

চেয়ারম্যান ৭ দিন হাজত বাসের পর আদালত তার অস্থায়ীভাবে জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তার সন্ত্রাসী তৎপরতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। তিনি তার সন্ত্রাসী বাহীনিকে খুন-জখমের জন্য প্রকাশ্যে হুমক দিলে তার লোকজন আমার বাড়ীতে লাঠি, রড ও হাসুয়া ইত্যাদি সহ উপস্থিত হয়ে আমার ছোট ভাই স্কুল শিক্ষক আবুল বাশার এবং আমার ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মোমিনকে রক্তাক্ত জখম করে।

আমি চেয়ারম্যানেকে পুনরায় তাকেসহ লোকজনকে আসামী করে মামলা অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন। গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মামলাটি রেকর্ড করেন যার নং ৩০ ১৯/৫/২০২২ইং। ওই মামলাতে সে জামিনে আছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনসাধারণ আতঙ্গের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি স্নান করছে। মামলায় হাজত বাসের পর গোদাগাড়ী থানা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে চার্জশীজ দাখিল করেছেন।

আইন অনুযায়ী কোন জনপ্রতিনিধির মামলায় অভিযুক্ত হলে মামলা নিষ্পর্ত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিধান থাকায় তাবে বরখাস্তের দাবি জানান অভিযোগকারী আজাহার আলী।

পরে গত ১০ জুন চেয়ারম্যানের হুমুকে আবারও অন্য একটি হত্যাকান্ড চালায়। সবমিলিয়ে চেয়ারম্যানের এমন কান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, পাকড়ী চেয়াম্যান জালাল উদ্দিনের মামলার সর্বশেষ কি অবস্থা তা জানেত চেয়েছেন বলে আমি কাগজপত্র দেখেছি। আমি কয়েকদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে দিবো বলে জানান।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে