পদে না থাকলেও তানোর আ.লীগের মাতবর তিনি

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৩; সময়: ১২:০০ পূর্বাহ্ণ |
পদে না থাকলেও তানোর আ.লীগের মাতবর তিনি

বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি : তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগি কোন সংগঠনের দলীয় পদে তার নাম নেই আবুল বাশার সুজনের। পেশায় ব্যবসায়ী। হাট-বাজার ইজারাদার হিসেবে পরিচিত। কোন দলীয় পদে না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ এখন তার হাতে।

উড়ে এসে জুড়ে বসা এই সুজনের দাপটে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। শুধু রাজনীতি নয়, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত নিয়োগ হচ্ছে সবই তার মাধ্যমে। এ নিয়োগ থেকে মোটা অংকের টাকা সুজন হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালে তানোর পৌরসভা এলাকায় সুজন পরিচিতি লাভ করতে থাকে। পৌর এলাকায় অভাবি মানুষের মধ্যে দান, মসজিদ, গোরস্থান, এতিমখানায় অনুদান দিতে শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ে পৌর এলাকায় বেশ পরিচিতি পেয়ে যান সুজন। ধিরে ধিরে সুজনের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে তানোর উপজেলাজুড়ে। রাজশাহী মহানগরীতে সুজনের বসবাস। নগরীর স্থানীয় বাসিন্দাও তিনি। মহানগরীর বাসিন্দা হলেও সুজন এখন পুরো উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

শুধু রাজনীতি নয়, উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার যত নিয়োগ হচ্ছে সবই তার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুজন নিজেই দুই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এক দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এছাড়াও তিনি একটি কলেজের গর্ভেনিং বডির অন্যতম সদস্য।

আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আবুল বাসার সুজন তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের কোন দলীয় পদে নেই। পদ নেই তবুও তার বিশাল দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নানান কৌশলে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করে ব্যবসায়ী সুজন। এ সুবাদে স্থানীয় এমপির কাছে ঘন ঘন যাতায়াত শুরু হয় তার। অল্প সময়ের মধ্যেই এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছের মানুষ হয়ে উঠেন সুজন। স্থানীয় সংসদ সদস্যর ডিও দিয়ে নিজের পছন্দের মনোনীত ব্যাক্তিকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সভাপতি করা হচ্ছে। এর পর শুরু হচ্ছে নিয়োগ বানিজ্য।

উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় ৫৪টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে তিনটি করে পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এগুলো নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন কর্মী ও একজন আয়া। এবং দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা মিলে হয়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি মাদ্রাসায় দুই পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বাড়তি সহ-সুপার, কমম্পিউটার অপারেটর পদেও জনবল নেয়া হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রতি পদে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। ২০২২ সালে ও চলতি বছর জুন পর্যন্ত প্রায় ৮৫টি পদে নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আবুল বাসার সুজন।

তিন পদে নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছে এমন একাধিক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়োগ কমিটিতে থাকলেও কিছু করার নেই। নিয়োগ প্রার্থীরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে সরাসরি উপরের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে আসে। যখন যে নেতা উপজেলা দায়িত্ব পান তখন তার দেয়া তালিকায় নিয়োগ দিতে হয়। তা না হলে নানান ভাবে নাজেহাল করবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করার জন্য এক টাকাও দেননা। তাদেরই পকেট ভরে।

বর্তমানে সুজন পুরো তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগি সংগঠনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করছেন। সম্প্রতি তানোর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার আওয়ামী লীগ যুবলীগ সেচ্ছাসেবক, মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ সকল সহযোগি সংগঠনের ত্রি-বাষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। এসব সম্মেলনের একক আধিপত্য সুজনের। তার দেয়া তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে। তাতে করে অনেক অযোগ্য নেতারা পদ পেলেও প্রবীন ও ত্যাগী নেতারা বাদ পড়ছে কমিটি থেকে। এতে তৃর্নমুলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ ২৩ জুলাই মুন্ডুমালা পৌরসভা আওয়ামী লীগ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। এক সম্মেলন থেকেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কৃষক লীগ ও মহিল লীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়। সে সম্মেলনের সবগুলো সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদের তালিকা প্রকাশ্যে মঞ্চে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে প্রদীপ সরকারের হাতে তুলে দেন সুজন। সে তালিকা ধরেই প্রদীপ সরকার সকল সংগঠনের কমিটির ঘোষনা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, তানোরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নষ্ট করে ফেলেছেন সুজন। তার একক আধিপত্যের কাছে সবাই অসহায়। তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না দীর্ঘ ১২ বছর তানোরের পুরো রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে আসছিলেন। ২০২২ সালে হঠাৎ করে তা সুজন নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। আর তাতেই উপজেলা চেয়াম্যানের সাথে বেশ অন্তদ্বন্দ্ব শুরু হয়। অনেক নেতাকর্মী দুই ভাগে ভাগ হয়েছে পড়েছেন। এলো মোলো হয়ে পড়েছে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আবুল বাসার সুজন বলেন, তানোরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে টাকা নেয়ার কোন প্রমান নেই। তবে, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন বিবেচনায় প্রার্থীরা ডোনেশন সরুপ টাকা দিয়ে থাকেন। এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেও বা কি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে