বিএনপি ‘জিরো টলারেন্সে’ নিষ্ক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩; সময়: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ |
বিএনপি ‘জিরো টলারেন্সে’ নিষ্ক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা আন্দোলন সফলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। গ্রহণ করেছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। এর ফলে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই মাঠে থাকতে হবে পদধারী নেতাদের।

হাইকমান্ড মনে করছে, দল যখন আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ‘অলআউট’ আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে, এমন অবস্থায় পদ-পদবি নিয়ে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখন থেকে সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে মাঠে থেকে কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে হবে। এমনকি স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও মাঠে নামতে হবে। অন্যথায় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির মূল্যায়নে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে হাইকমান্ড। দায়িত্বে অবহেলায় গত মঙ্গলবার ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যা শুরু হয়েছে। এটাকে দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের জন্য কঠোর বার্তা বলে মনে করছেন অনেকে।

অবস্থান কর্মসূচিসহ ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল বুধবার রাতে বিএনপির প্রধান অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অন্য অঙ্গসংগঠনের ক্ষেত্রেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জানা যায়, পুলিশের অনুমতি ছাড়া অবস্থান কর্মসূচিকে ঢাকায় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাইয়ে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছিল হাইকমান্ড। বিএনপির মূল্যায়ন, লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মহাসমাবেশ সফল হলেও সমন্বয়হীনতা ও নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে মাঠে না নামায় অবস্থান কর্মসূচি সফল হয়নি। এর মধ্য দিয়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। তবে পুলিশ ও সরকারি দলের মারমুখী অবস্থান এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সেভাবে সামনে আসেনি।

তবে কর্মসূচিতে সিনিয়র কয়েকজন নেতাসহ দলের মধ্যম সারির নেতাদের ভূমিকায় হাইকমান্ড খুবই নাখোশ। একই সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও চিন্তিত বিএনপি। তা ছাড়া অবস্থান কর্মসূচি থেকে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর হঠাৎ প্রস্থান এবং ব্যাপক নেতাকর্মী ছাড়া মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকেও ভালোভাবে নেয়নি হাইকমান্ড। যদিও কর্মসূচিতে আমানের অংশগ্রহণকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তাদের যুক্তি, পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয়ে অন্য নেতারা না নামলেও আমান কর্মসূচিতে এসেছেন, আটকও হয়েছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ার নেপথ্য কারণ এবং কোন কোন নেতা, কেন সেদিন মাঠে নামেননি, হাইকমান্ডের নির্দেশে সে তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া কোন নেতা কর্মসূচিতে যাচ্ছেন, কে যাচ্ছেন না—ভিন্ন পদ্ধতিতে সেটাও মনিটরিং করছে হাইকমান্ড। অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গত মঙ্গলবার ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যদিও এক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণ দেখানো হয়েছে। ছাত্রদল সভাপতির ওইদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা এলাকায় থাকার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সেখানে যাননি। বিকেলের দিকে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন।

এদিকে একটি কর্মসূচিতে গরহাজিরের কারণে ছাত্রদল সভাপতিকে এভাবে হঠাৎ করে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ভালোভাবে নেননি দলের অনেকে। তাদের মতে, এ মুহূর্তে ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে আন্দোলনে। কারণ, বিএনপির আন্দোলনে মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদল। সেই ছাত্রদলকে সংগঠিত করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার পেছনে সভাপতি শ্রাবণের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। তা ছাড়া সদ্য অনুষ্ঠিত দেশব্যাপী ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ সফলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শ্রাবণ। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ওই সমাবেশগুলো তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে বলে দাবি বিএনপির। সব মিলিয়ে ছাত্রদল সভাপতি শ্রাবণ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মনে করেন অনেকে।

এদিকে শ্রাবণের ঘটনায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করা দল ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাই এখন পদ হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন আলোচনাও রয়েছে মাঠে। অনেকে মনে করেন, একদফার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে ‘একটি কর্মসূচির ব্যর্থতা’ বিবেচনায় নিয়ে দল থেকে নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া যুক্তিসংগত হবে না। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভিন্ন বার্তা যাবে। আন্দোলনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তা ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে নেতাদের সরিয়ে দিলে যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট পাওয়াও কঠিন। কারণ, এ মুহূর্তে বিকল্প কাউকে দায়িত্বে আনলে তাকে ঘিরে নতুন করে আন্দোলন পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এ জন্য এখন যথেষ্ট সময় নেই। তাই ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় নেতাদের জন্য ‘বার্তা’ দেওয়া হলো, যাতে আগামী কর্মসূচিতে তারা সক্রিয় হয়।

ছাত্রদল সভাপতিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে অবশ্য দলের রুটিন কাজ বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে শ্রাবণকে তার দায়িত্ব পালন থেকে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে। এটা রুটিন কাজ। অন্য কোনো ব্যাপার তার জানা নেই।

বিএনপির কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সমন্বয়হীনতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা নেই বলে দাবি করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি কালবেলাকে বলেন, ঢাকায় মহাসমাবেশের মতো একটি বিশাল কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করে পরের দিন অবস্থান কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে