যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ‘মানব পাচার’ করছে বাংলাদেশি চক্র

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৩; সময়: ২:৪৫ অপরাহ্ণ |
যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ‘মানব পাচার’ করছে বাংলাদেশি চক্র

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্নে মানব পাচারের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আর এই অবৈধ মানব পাচার করতে গিয়ে ব্রাজিল থেকে কখনো গাড়িতে, কখনো জঙ্গল দিয়ে দিনের পর দিন হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পানামায়। কখনো টানা দশ ঘণ্টা হাঁটানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়া অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশের একটি মানব পাচার চক্রের সন্ধান পান মার্কিন কর্মকর্তারা। চক্রের হাতে থাকা অনেক ভুক্তভোগীর দেওয়া বর্ণনা থেকে জানা যায় কীভাবে মানব পাচার করে এই চক্রটি।

অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশে ফেরত আসা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ব্রাজিল থেকে কখনো গাড়িতে, কখনো জঙ্গল দিয়ে দিনের পর দিন হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পানামায়। কখনো টানা দশ ঘণ্টা হাঁটানো হয়। জঙ্গলে পানির সংকট, পোকামাকড়ের কামড়ে শরীর ফুলে গিয়েছিল আমার। পেছনে ফেরার কোনো রাস্তা ছিল না।

এই ঘটনায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গত জুন মাসে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই মামলার তদন্ত করে রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং আকলিমা আক্তার (বিউটি) নামে তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় তদন্তের পর ডিবির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে, রুহুল আমিনসহ চক্রের সদস্যরা ১০০ জনের বেশি নাগরিককে ইতিমধ্যে গায়ানা ও সুরিনামে নিয়েছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা নেন। এরপর প্রথমে তাদের নিয়ে যান ভারতের নয়াদিল্লিতে। সেখান থেকে ভ্রমণ ও ব্যবসায়ী ভিসায় নেওয়া হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। পরে নতুন বোর্ডিং পাস ও নতুন টিকিটে তাদের কোপা ও ক্যারিবিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে করে নেওয়া হয় গায়ানা ও সুরিনামে। সেখান থেকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করান।

অবৈধ পথে গায়ানায় প্রবেশের অভিযোগে গত ১২ থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে দেশটির রাজধানী জর্জ টাউনের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এর সূত্র ধরে রুহুল আমিন, আকলিমা ও ফাহাদ হোসেন নামের তিনজনকে আসামি করে মামলাটি করে মার্কিন দূতাবাস। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরিফ ও সনেট নামে আরও দুজনের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

মামলার কাগজপত্র ও মোফাজ্জলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পাঁচ বছর আগে (২০১৮ সালের ১০ মার্চ) যশোর সীমান্ত দিয়ে প্রথমে তাকে ভারতে নেওয়া হয়। পরে উড়োজাহাজে করে তাকে নেওয়া হয় আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। সেখান থেকে আরেক ফ্লাইটে ইথিওপিয়া হয়ে নেওয়া হয় ব্রাজিলে। পরে ব্রাজিল সীমান্ত পার করে তাকে নেওয়া হয় পেরু। পেরু থেকে কলম্বিয়া হয়ে তিনি পৌঁছান পানামায়। পরে পানামা থেকে কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা হয়ে মোফাজ্জল পৌঁছান মেক্সিকোয়। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে তাকে পাচার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মোফাজ্জল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাকে পাঁচ বছরের জন্য দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, চার মাসের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন তিনি। ব্রাজিলের দুর্গম জঙ্গল পাড়ি দেওয়ার ঘটনা মনে পড়লে এখনো তার গা শিউরে ওঠে। এমনও দিন গেছে সারা দিন কিছু না খেয়ে হাঁটতে হয়েছে। সে জীবনের এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা।

যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে যারা মানব পাচার করছেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে মার্কিন দূতাবাসের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমান জানিয়েছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে