‘ইউনূসের পক্ষে বিদেশিদের চিঠি বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ’

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৩; সময়: ১০:২৩ অপরাহ্ণ |
‘ইউনূসের পক্ষে বিদেশিদের চিঠি বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দেয়ার সমালোচনা করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, এ ধরনের বিবৃতি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। বিচার বিভাগের উপর এ ধরনের অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলেও মনে করছেন তারা।

বিবৃতি দাতারা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের বিভ্রান্তিমূলক ও অজ্ঞতাপ্রসূত মতামত প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের মতো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকেরা। বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।

সোমবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লেখেন ১৬০ বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে রয়েছে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের ব্যক্তিরা।

বিষয়টি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বলার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন টুইট করে ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিবৃতিতে বলেছে, যারা খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন, তারা শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানিয়েছেন।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।

সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করে। কাজেই এ ধরনের চিঠির মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন।

শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ জানিয়েছে বলেছে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

‘শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং শ্রমিকদের চাকরিতে স্থায়ী না করার অভিযোগ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাই। এছাড়া অন্য একটি মামলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, খোলা চিঠিতে যে সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে, তাদের দেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাছাড়া একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এ ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সবকিছু আইন অনুসারে পরিচালিত হয়। স্বাধীন বিচার বিভাগ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং এক্ষেত্রে কারো কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা এবং স্বাধীন। অর্থাৎ বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে, নির্বাহী বিভাগ এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে এ দেশের সকল নাগরিকের যেমন আইনের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার রয়েছে, তেমনি আইনের প্রয়োগ সকল নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আমরা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছি যে, দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান এবং কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।

‘বাংলাদেশের আইন ও বিচার বিভাগকে না জেনে, যথাযথ পর্যালোচনা না করে অযাচিতভাবে বিচারাধীন মামলার বিষয়ে বিবৃতি বা চিঠি প্রদান ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ও দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগের উপর অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ, যা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনা হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি কোনো ভাবেই কাম্য নয়।’

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বিশ্বাস করে যে, বিবৃতি বা চিঠি প্রদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের বিভ্রান্তিমূলক ও অজ্ঞতাপ্রসূত মতামত প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের মতো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে