স্ত্রী-কন্যার পাপের ভার কতটা আপনার?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩; সময়: ৪:১৫ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
স্ত্রী-কন্যার পাপের ভার কতটা আপনার?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইসলামি শরিয়তে গুনাহের দায়ভার সাধারণত ব্যক্তির নিজের। কারো গুনাহের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করা হবে না। তবে, অধীনস্থ ও নারীর গুনাহের দায় কিছু কারণে অভিভাবককে নিতে হবে।

তারা হলো সেসব পুরুষ, যারা পরিবার পরিজন বা অধীনস্থকে সঠিক পথে পরিচালিত করে না এবং তাদের গুনাহের কাজ দেখেও বাধা দেয় না। ওসব পুরুষকে ইসলামি পরিভাষায় দাইয়ুস বলা হয়।

দাইয়ুসের পরিচয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দাইয়ুস হলো সেই ব্যক্তি—যে তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করে না।’

(তাবরানি: ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব: ৩৪৭৬)। অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫৩৭২)

ইসলামে দাইয়ুস ব্যক্তিরা অভিশপ্ত ও ঘৃণিত। দুনিয়াতে তাদের মর্যাদা নেই, পরকালেও তারা জান্নাতের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যাবে না—মা-বাবার অবাধ্য, দাইয়ুস এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ২২৬)

হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তখন জান্নাতকে বলেছেন, আমার সম্মান-গৌরব ও পরাক্রমশালীর শপথ! কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দাইয়ুস ব্যক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ি, জাকাত অনুচ্ছেদ: ২৫৬২; মুসনাদে আহমদ: ২/১৩৪)

সুতরাং পরিবারের সদস্যদের দ্বীনি শিক্ষা দিতে হবে। পর্দার বিধান সম্পর্কে, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার পরিণতি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে তাদের গুনাহের কারণে নিজেকে গুনাহগার হতে হবে।

যেমন : কোনো নারীকে যদি নিয়মিত বাইরে যেতে হয় এবং বাইরে গিয়ে সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে স্বামী বা বাবা পদক্ষেপ নেবেন। কোনো পদক্ষেপ না নিলে এবং নারী বাইরে গিয়ে একইভাবে গুনাহ করলে অভিভাবক গুনাহগার হবেন। বাবা কিংবা স্বামী যে-ই অভিভাবক হোন না কেন, তিনিই ওই গুনাহের জন্য গুনাহগার হবেন এবং দাইয়ুস হিসেবে বিবেচিত হবেন।

মূলত জাহান্নামের আগুন থেকে শুধু নিজে বাঁচার চিন্তা করলে হবে না, অধীনস্থদেরও বাঁচাতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেশতা, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না।’ (সুরা তাহরিম:

৬)ইবাদতগুজার ব্যক্তিরা তো অবশ্যই তাদের সন্তানাদি ও স্ত্রীদের ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখবেন। আপনার অবহেলার সুযোগে তারা গুনাহে জড়ালে সারাজীবন কষ্ট করে ইবাদত করার পরও আপনার শেষ ঠিকানা হতে পারে জাহান্নাম।

এজন্যই ফতোয়ার কিতাবে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে যে, ‘যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী পর্দা না করে তাহলে সে ব্যক্তির ওপর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীকে পর্দা করার জন্য বাধ্য করা।

কিন্তু তা না করে যদি সে স্ত্রীর বেপরোয়া, পাপপূর্ণ জীবনযাপন মেনে নেয় এবং সে ইবাদত-বন্দেগিও করে তাহলে এ অবস্থায় স্বামী গুনাহগার ও জাহান্নামি হবে। আর নামাজ ও ইবাদত গুনাহগারেরও কবুল হয়। (আপকে মাসায়েল অওর উনকা হল: ৮/৬৮, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৮/৯১)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এককথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে।’ (বুখারি: ৭১৩৮; মুসলিম: ১৭০৫)

তবে, যেসব নারী স্বামী বা বাবার অবাধ্য, তাদের গুনাহের ভার স্বামী/বাবাকে নিতে হবে না। বরং ওই গুনাহ নারীকেই বহন করতে হবে। এর দলিল হলো ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না।’

(সুরা আনআম: ১৬৪) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রত্যেক বিষয়ে শরিয়তের বিধি-বিধান যথাযথ মেনে চলার এবং নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে