রাসিকের উদ্যোগে ১২ স্থানে ফ্রি ডেঙ্গু পরীক্ষা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩; সময়: ৬:১৩ অপরাহ্ণ |
রাসিকের উদ্যোগে ১২ স্থানে ফ্রি ডেঙ্গু পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছেন রোগী। গত জুলাই থেকে রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসা শুরু হয়। রোগীর চাপ বাড়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। তবে নগরীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় বেশি ফি আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা। এদিকে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ বাড়ায় নগরীর ১২টি স্থানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করছে রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা গেছে, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পালাক্রমে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজশাহী মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফএম শামীম আহম্মেদ জানান, অনেকেই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতালের ল্যাবে মাত্র ৬০ টাকা ফিতে তারা ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারছেন। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে বিশেষ ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ জ্বর বা টাইফয়েড শনাক্ত হলে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যাদের জ্বর তীব্র নয় তাদের জরুরি বিভাগ বা ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় রাসিকের উদ্যোগে নগরীতে মোট ১২টি স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় থাকা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও অন্যটি হলো রাসিকের মালিকানাধীন রাজশাহী সিটি হাসপাতালে।

ডা. আঞ্জুমান আরা আরও জানান, রাসিকের এসব কেন্দ্রে বিনামূল্যে রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন আসছেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় অর্ধেকের বেশি জ্বরাক্রান্ত রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। তাদের স্লিপ দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসছেন। কারো কারো জ্বর ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে রাসিকের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে রাসিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দিচ্ছেন রোগীকে।

অন্যদিকে নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা। রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিলেও কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই ফি ৬০০ টাকা করে আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আমরা যতটুকু জানি ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৩০০ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোতে। অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৯৮ জন শনাক্ত রোগী। দিন শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা।

রাজশাহী মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফএম শামীম আহম্মেদ জানান, জুলাইতে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়ে গত আগস্টজুড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ জন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে রোগী আসার হার কিছুটা কমেছে।

রামেকহা পরিচালক আরও জানান, রাজশাহী মেডিকেলে দুটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১০৩টি বেড রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেলে মোট ১ হাজার ৬৫ জন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫৭ জন রোগী স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বাকি ৫০৮ জন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেলে আসেন চিকিৎসা নিতে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৯৯৫ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও রাজশাহীর সিভিল সার্জনকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসের অনুরোধ জানিয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। জানা গেছে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র শনাক্ত ও বাড়ি বা দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধ রয়েছে। জুলাই ও আগস্টে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীতে অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে