এমপি বাবলুর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩; সময়: ২:৩৭ অপরাহ্ণ |
এমপি বাবলুর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এডিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্প দেওয়ার নামে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত প্রায় পাঁচ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শতাধিক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নির্বাচনি হলফনামায় তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ভুক্তভোগীরা এমপি বাবলুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুরের মাঝিরা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য মজিবুর রহমান ও অন্যরা অভিযোগ করেন, সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার বাৎসরিক আয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। সে হিসাবে তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা। ব্যাংক হিসাব শূন্য ও একটি মাটির বাড়ির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

তিনি ২০০৭ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত কারিগরি বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নামে ঘুস নেওয়ায় এক ব্যক্তি মামলা করেছিলেন। এমপি হলফনামায় ৩(ক) ও ৩ (খ)তে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকার তথ্য গোপন করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আগে পুরাতন মোটরসাইকেলে চলাফেরা করলেও সংসদ-সদস্য হওয়ার দুই মাসের মাথায় ৩৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। মাটির বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। শাজাহানপুর উপজেলার ডোমনপুকুর, মাঝিরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চার জামাতাকে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। ডোমনপুকুর এলাকায় মাঝিরা বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে নিজের টাকায় জায়গা কিনেছেন।

নিজেই দাবি করেন, তিনি (এমপি) শতকোটি টাকার মালিক। ২০২০ সালের অক্টোবরে অস্ত্র ও ম্যাগাজিনসহ নিজের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে তুমুল সমালোচিত হন এমপি বাবলু।

তারা আরও বলেন, এমপি বাবলু এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গোরস্থান, ক্লাব ও সমিতিকে টাকা ছাড়া কোনো প্রকল্প দেন না। কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এডিবি, সৌর প্যানেল, টিউবওয়েলসহ সরকারের যত প্রকল্প আছে সব টাকার বিনিময়ে দিয়ে থাকেন। গত প্রায় পাঁচ বছরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ায় দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয় থেকে তাকে নোটিশ করা হয়েছিল। তদন্তে অনেক অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির সন্ধান পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেন। সেই কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর এমপি বাবলু মামলার কার্যক্রম চাপা দিয়ে রেখেছেন। তারা এমপির সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সরকারি বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও লুটপাটের বিচার চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর অভিযোগ করেন, এমপি বাবলু কাবিটা-কাবিখা প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ দেওয়ার নামে তার কাছে চার লাখ টাকা নেন। আজ পর্যন্ত প্রকল্প পাননি। তাকে টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। এ টাকা ফেরত নিয়ে বাগবিতণ্ডায় এমপি শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুর দিকে পিস্তল তাক করেছিলেন। এমপি বাবলু কয়েক বছরে প্রকল্প দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিরা উত্তরপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ আলী মিঠু অভিযোগ করেন, এমপি বাবলু ও তার পিএ রেজাউল করিম রেজা তাকে ১২টি প্রকল্পের কাজ দেওয়ার নামে তিন লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ দেওয়া হয়নি। অনেক দেনদরবার করে মাত্র ২০ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন। তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। সেখান থেকেও এমপি পাঁচ হাজার টাকা কেটে নিয়েছেন।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ-সদস্য বাবলু নির্বাচনি হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন এর চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে বগুড়ায় নির্মাণাধীন বহুতল বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত ৩-৪টি গাড়ি কেনার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত একটি বিলাসবহুল পাজেরোও আছে। নোটিশের প্রেক্ষিতে এমপি বাবলু ২০২১ সালের ২৩ জুন তার সম্পদ বিবরণী জমা দেন।

সাবেক সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি তদন্তকালে এমপি বাবলুর স্ত্রীর নামে কোটি টাকার বেশি ও এমপির নামে ৬০-৭০ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা। এতদিন কেন মামলা হয়নি তা বোধগম্য নয়। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এমপি বাবলু তার সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন। যা বর্তমানে অনুসন্ধানে রয়েছে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকালে ফোনে সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা সবাই মাদকসেবী। তারা কারও ইন্ধনে ও চাঁদা না পেয়ে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যাচার করছেন। তিনি প্রকল্প দেওয়ার নামে কারও কাছ থেকে কখনো টাকা নেননি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ অর্জন করেননি বলেই দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। তিনি দাবি করেন, তার চার জামাতা অনেক ধনী। তারা নির্বাচনের সময় তাকে সহযোগিতা করেছে। এখনো অনেক সহযোগিতা করে থাকে। তাই তাদের ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া তিনি নিজেও কোনো ভবন নির্মাণ বা বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় করেননি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে