রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩; সময়: ৭:১০ অপরাহ্ণ |
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন। তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীরা। কে আসছেন নেতৃত্বে- এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চত্ত্বরগুলোতে পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার, বিলবোর্ডে ভরপুর। সেইসঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে দলীয় টেন্টে।

প্রতিদিনই পদপ্রত্যাশীরা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল, শোডাউনের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। আর রাত হলেই কর্মীদের নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতারা বসছেন মিটিংয়ে, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

গত সাড়ে ছয় বছরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনবার পরিবর্তন এলেও এই কমিটির পরিবর্তন হয়নি। এ সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, প্রক্সিকাণ্ড, ছিনতাই, আবাসিক হলে আসন–বাণিজ্যের মতো বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এর যৌথ সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩’ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩’ আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সম্মেলনটি স্থগিত করা হয়। এ লক্ষ্যে ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। যেখানে নতুন কমিটির জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৯৪ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন বলেন, “যারা আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলিয়ান, যারা সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছে জনপ্রিয় তারা যেন তারা যেন নেতৃত্বে আসে এ কামনা করি। যদি আমি নেতৃত্বে আসি তবে বাণিজ্য জিরোর কোঠা নিয়ে আসবো। দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ যেসব খাবারের মান ও মূল্য এবং রিক্সা ভাড়া, অটো ভাড়া এসব নির্ধারণের জন্য প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করব। আর সাধারণ শিক্ষার্থীর যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকবো।”

গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, “নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজশাহীর স্থানীয় বা বাহিরের বিষয়টি বিবেচ্য হবেনা বলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমাদের অভিভাবক জননেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ভাই এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুযোগ্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ নিশ্চয়ই যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি চর্চা করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যারা গ্রহণযোগ্য, মৌলবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এই ক্যাম্পাস কে আপোষহীন দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলবে তেমন যোগ্য প্রার্থীদের মূল্যায়ন করবে বলে আমরা শতভাগ আশাবাদী।”

রাবি ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, সামনে নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত ও চাঙা রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হিসাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগকে নিয়ে যেতে যারা কাজ করবে এবং যাদের স্বচ্ছতা বিচক্ষণতা ইমেজ রয়েছে, যাদের নামে কোন অভিযোগ নেই আর যারা কমিটিতে সক্রিয় থেকে রাজনীতি করেছে যারা ক্যাম্পাসকে আগলে রাখবে এমন যোগ্য নেতা আসুক রাবিতে এটাই ছাত্রলীগের একজন কর্মী ও সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে চাওয়া।

বর্তমান রাবি ছাত্রলীগ শাখার প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, “নেতৃত্বে এলে আসন–বাণিজ্য ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়তে কাজ করবো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকবো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সামনের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চায়। এ ছাড়া ছাত্রলীগের এই ইউনিটকে শক্তিশালী ও শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবো।”

নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া সামনে যেহেতু সামনে নির্বাচন আর ইসলামি ছাত্রশিবির নামে একটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন আছে যারা ইসলামকে সামনে রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা চাইবো যে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে যারা মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে, ক্যাম্পাস সুশৃঙ্খল রাখা জন্য যারা যোগ্য, যারা সিট বানিজ্য করবে না, চাঁদাবাজি করবে না, যারা মারামারি করবে না তারা যেন ক্যাম্পাসের নেতৃত্বে আসে।’

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল মুক্তাদির তরঙ্গ বলেন, ‘আসলে রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন তো আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল। আমাদের পূর্বসূরিদের রক্ত, শ্রম, ঘামের উপর এ সংগঠন দাঁড়িয়ে আছে। এখন এ সংগঠনে এতোদিন পর আবার সম্মেলন হচ্ছে, আমাদের মধ্যে প্রাণসঞ্চার হয়েছে। আমি যেটা চাই যে, যারা নিয়মিত ছাত্র এবং যারা সততার সাথে রাজনীতি করছে তারা যেন নেতৃত্বে আসে।’

সম্মেলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগ শাখার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এবং সেই সাথে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি ২৬তম সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে আমরা দায়িত্ব তুলে দিতে পারবো এবং সেই সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা সম্মেলন শেষ করতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই যারা ছাত্রলীগের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত, ছাত্রলীগের জন্য যারা অবদান রেখেছে, ছাত্রদের মধ্যে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, জাতীয় নির্বাচনে যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, যারা আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান এমন নেতৃত্বের কাছে আমরা আগামী দিনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্ব তুলে দিতে চাই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব একটি বিতর্ক বিহীন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি উপহার দিতে। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই সচেষ্ট এবং আমরা সর্বোচ্চভাবে ইচ্ছুক যে কোন প্রকার বিতর্ক আমাদের এই কমিটি নিয়ে না হয়।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় নতুন কমিটি। প্রায় ছয় বছর যাবৎ সেই কমিটিই নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে