কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন তুলছেন সুজানগর হাসপাতালের ৩ চিকিৎসক
এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : কর্তব্য রোগীদের সেবা দেওয়া হলেও প্রতি সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে পাবনার সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ গালিবা তাসনিম, ডাঃ সেলিম রেজা ও ডাঃ মরিয়ম জামিলার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয় কর্মস্থলে মাসের বেশিরভাগ দিন অনুপস্থিত থেকেও প্রতিমাসে নিয়মিত পুরো বেতন-ভাতা উত্তোলন করে ভোগ করে যাচ্ছেন ওই তিন জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবে দিনের পর দিন দায়িত্বে অবহেলা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেবাবঞ্চিত রোগী,তাদের স্বজন ও স্থানীয় সাধারণ জনগণ। জানাযায়, ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার ৩ লাখ ৩২ হাজার মানুষের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই একটি মাত্র হাসপাতালটিকে ২০০২ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এবং এই হাসপাতালে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট এর পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ৩ জন। সুজানগর পৌরসভার চরভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা নুরু চৌধুরী নামক এক ব্যক্তি জানান, হাসপাতালে নিয়মিত ওই তিন জুনিয়র কনসালটেন্ট না আসায় প্রায়ই চিকিৎসা না পেয়ে রোগী নিয়ে ফিরে যেতে হয়।
তিনি বলেন সচ্ছলরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা নিতে পারলেও তাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সরকারি হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাযায়, গত ২২-০২-২০২৩ তারিখে জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) ডাঃ সেলিম রেজা ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ গালিবা তাসনিম এবং গত ২০-১২-২০২২ সালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস) ডাঃ মরিয়ম জামিলা যোগদান করেন। যোগাদান করলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস) ডাঃ মরিয়ম জামিলা ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোঃ) ডাঃ সেলিম রেজা বগুড়া এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ গালিবা তাসনিম পাবনা শহরে অবস্থান করে থাকেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে অবস্থান করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সেই নির্দেশনা অমান্য করে সপ্তাহের ২-৩ দিন এসে হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তাহের স্বাক্ষর করে কিছুক্ষণ হাসপাতালে অবস্থান করে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস) ডাঃ মরিয়ম জামিলা ও জুনিয়র কনসালটেন্ট(অর্থোঃ) ডাঃ সেলিম রেজা বগুড়া এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ গালিবা তাসনিম পাবনা শহরে চলে যান।
সপ্তাহের ৩ দিন কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তাহের স্বাক্ষর করার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সানজিদা মুজিব যুগান্তরকে জানান, আমি ওই তিন জুনিয়র কনসালটেন্ট কে সরকারি নির্দেশনা অনুযাযী শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন কর্মস্থলে আসার কথা বলেছি। এবং যেদিন আসবেন না সেদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করার কথাও জানিয়েছি। এছাড়া নিয়মিত কর্মস্থলে না আসার কারণে ওই তিন চিকিৎসক কে সম্প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়েছে। পাবনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদুল্লাহ দেওয়ান এর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে জানান, সরকারি পদে বহাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং জনগণকে সেবা না দিয়ে বেতন-ভাতা তোলা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।আমি জেলায় নতুন যোগদান করেছি।
এ ধরণের অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পাবনা ২ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, এ ধরণের অনিয়ম শুধু চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থিই নয়,অবধারিতভাবে এটা দুর্নীতি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টির সত্যতা পেলে ওই ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে বলে । অভিযোগের বিষয়ে জানতে জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ গালিবা তাসনিম এর মোবাইল ফোনে গত তিনদিন ধরে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস) ডাঃ মরিয়ম জামিলা ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোঃ) ডাঃ সেলিম রেজা শনিবার এ প্রতিনিধিকে জানান, তারা এখন থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে সেবা প্রত্যাশী রোগীদের সেবা প্রদান করবেন।