পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেখলে এখন স্বস্তি পায় : আইজিপি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩; সময়: ৩:১৫ অপরাহ্ণ |
পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেখলে এখন স্বস্তি পায় : আইজিপি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পর্যটকদের সেবায় ও নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যাপক কাজ করছে দাবি করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বিভিন্ন আঙ্গিকে ট্যুরিস্ট পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেখলে পর্যটকরা এখন স্বস্তিবোধ করেন। রাত ১০টার সময় এখন আর হোটেলে পর্যটকদের ঢুকতে বাধ্য করা হয় না। পরিবর্তন এসেছে।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে একটি সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। ৩৫ তোপখানা রোডে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত আইজিপি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান হাবিবুর রহমান।

আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠনের পর জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ২০১৩ সালে ছিল ২.৯ শতাংশ। সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪.৪৪ শতাংশ। আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না, আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশকে আরও গতিশীল ও সেবার মান বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছি।

পর্যটন খাতের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এ খাতে ২০১৫ সালে কর্মসংস্থান ছিল ১৭ লাখ, ২০২২ সালে তা হয়েছে ৪০ লাখ। পর্যটন থেকে রাজস্ব খাতে ২০১৩ সালে আয় ছিল ৬১৩ কোটি টাকা, ২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী হয়েছে ২২৭৯ কোটি টাকা।

ভ্রমণ পর্যটনে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ছিল ১২৩তম অবস্থানে। সেখানে এখন হয়েছে ১০০তম দেশ। আমাদের অবস্থান এগিয়েছে।

২০১৭ সালে দেশি পর্যটক দেশি বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করেছে এক কোটি ৩৬ লাখ, ২০২২ সালে তা হয়েছে ৪ কোটি ২৫ লাখ।

২০১৭ সালে বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছে ১ লাখ ৩৭ লাখ। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার। এই বৃদ্ধিই প্রমাণ করে আমাদের পর্যটন খাত এগিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশকে আরও ট্যুরিস্টবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে। যে কারণে ট্যুরিস্ট পুলিশের ওপর দায়িত্ব ও প্রত্যাশাও বাড়ছে।

আইজিপি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে অনেক বেশি এগিয়ে যাওয়া দরকার। যে কেউ ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ সেবা দিচ্ছে। চোরও ধরা পড়ার পর মারধর থেকে রক্ষা পেতে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চাইছে।

সাগরে আটকে পড়া জেলেরাও ফোন করে উদ্ধারে সহযোগিতা নিচ্ছে। যেভাবে বিকশিত হওয়া দরকার, প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের সক্ষমতা ও সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, ট্যুরিজম একা বিকশিত হয় না, এটা একার কারো না, এটা সবার। সবার দায়িত্ব রয়েছে।

কিন্তু এটা বুঝতেই আমাদের অনেক সময় লেগে গেলো। প্রাইভেট সেক্টর ছাড়া যে পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়া যায় না, সেটা বুঝতেও আমাদের দেরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ট্যুরিজমের বড় কাজ হচ্ছে প্রমোশন করা, আকৃষ্ট করা। এটা কোনো ঠুনকো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের যে সৌন্দর্য সেটা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের এখন পর্যন্ত অনেক সম্ভাবনাময় সেক্টর আছে, কিন্তু এখনো এগুলো আমরা বিশ্বের কাছে তুলেই ধরতে পারিনি।

পর্যটন আর ব্রান্ডিং, প্রমোশন, সিকিউরিটি একসঙ্গে গাঁথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা পর্যটনকে প্রমোট, নিরাপদ করতে ভালো কাজ করছিলেন, তাদের অনেককে বদলি করে দেওয়া হয়। তাদের অন্তত ৪/৫ বছর রাখা উচিত।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ট্যুরিস্ট ব্যবস্থাপনায় হাইজিন খাবার গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কার ৬০ শতাংশ আয় পর্যটন খাতে।

করোনাকালে তাদের সংকট তৈরি করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন করে পর্যটনখাতে বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত ঝুঁকিতে থেকেই যাচ্ছে।

যে কোনো ঝুঁকিতে পর্যটনখাতে একটা প্রভাব আছে। ঝুঁকিগুলো পর্যটকদের মধ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যেকোনো রিস্ক ব্যবসায় সমস্যা তৈরি করে।

হলি আর্টিসান হামলার পরে কিন্তু হোটেল, হসপিটালিটি, রেন্ট সার্ভিস, বিদেশি পর্যটক আসাসহ সার্বিক পর্যটনখাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল যার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।

আরেকটি হচ্ছে, প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস। পলিটিক্যাল, রিলিজিয়ন প্রভাব পড়ে পর্যটন খাতে। ঝুঁকির কারণে ইমেজ সংকট তৈরি করে। অথচ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কিন্তু ইমেজ তৈরি করতে হয়।

বাংলাদেশ ট্যুুরিজম বোর্ডের পরিচালক (যুগ্মসচিব) শাহ আবদুল আলীম খান বলেন, আমরা যদি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে চাই, দেশে যদি বিশ্বমানের পর্যটন ব্যবস্থা গড়তে চাই তাহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যেটা পুলিশ করছে। পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্নিং বডির সদস্য ও চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, পর্যটন খাত অনেক সম্ভাবনার।

সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে পর্যটন খাতকে অধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। এই খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে বিদেশি পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ বেশক’টি পর্যটন স্পটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। যা প্রশংসনীয়। নারীদের বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের পর্যটনে উৎসাহিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব বলেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের ১৭টির তিনটিই সরাসরি পর্যটনখাতের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশকে বৈশ্বিকভাবে ব্রান্ডিং করতে হলে আন্তর্জাতিকভাবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হবে। স্মার্ট ট্যুরিজম ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। রোবটিক সার্ভিসে ব্যাগেজ, লাগেজিং কার্যক্রম চলছে। অনেক দেশে নিজস্ব ইন্টারনেট, পরিবহন সেবা।

কোভিডের বড় প্রভাব পড়েছে পর্যটনখাতে। আবার কোভিড পরবর্তীতে পর্যটনখাতকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বৈশ্বিকভাবে পর্যটনখাতকে যেভাবে নিরাপত্তা, হসপিটালিটি সার্ভিসকে উন্নত করা হয়েছে, সেখানে আমাদেরও গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রচার-প্রসার, ১৩ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়, ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রাই শুরু হয়েছে দেরিতে, তাও সীমিত জনবলে। পর্যটনখাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে