সরকারের সাফল্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩; সময়: ১১:০১ অপরাহ্ণ |
সরকারের সাফল্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্যের ‍মুকুটে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি নতুন পালক। প্রমত্তা নদী পদ্মার ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালুর ১৫ মাসের ব্যবধানে ট্রেন চালু হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের মানুষ প্রথমবারের মতো রেল যোগাযোগের আওতায় আসছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-রুটের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে আরেকটি স্বপ্নের। এ উপলক্ষে মাওয়া এলাকায় সুধী সমাবেশ এবং ভাঙ্গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন সরকারপ্রধান।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে পদ্মা সেতুতে সড়ক যোগাযোগ, রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে। ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম দফায় এই রেলপথ উদ্বোধন হচ্ছে।

এছাড়া ২৯ অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হচ্ছে। এর আগের দিন ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগে প্রবেশ করবে আরেকটি নতুন দিগন্তে। এদিন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশে (চট্টগ্রামের কর্ণফুলী) নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। এ দুটি মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনই হবে হয়তো বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের উন্নয়ন কর্মসূচির শেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরপরই শুরু হবে নির্বাচনের ৯০ দিনের কাউন্টডাউন।

রেল মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে মাওয়া প্রান্তে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে মাওয়া পৌঁছে সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু রেল সংযোগ উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। পরে বেলা পৌনে একটায় প্রধানমন্ত্রী মাওয়া রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভাঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

রেলপথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ভাঙ্গা রেল স্টেশনে পৌঁছাবেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন ক্ষমতাসীন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। জনসভা শেষে তিনি পিতৃভূমি গোপালগঞ্জে যাবেন এবং সেখানে একদিন অবস্থান শেষে বুধবার (১১ অক্টোবর) সড়ক পথে ঢাকায় ফিরবেন।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে রেল সংযোগ উদ্বোধন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই রুটের প্রত্যেকটি স্টেশন বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উদ্বোধনী ট্রেনটিও সাজানো হয়েছে রঙবেরঙের ফেস্টুন ও ফুল দিয়ে।

রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলাসহ যাবতীয় বিষয়ে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল সংযোগ প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর হক।

তিনি বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে এই রেল প্রকল্পের কাজ করছি। ১০ অক্টোবর আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত দিন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমরা ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গা স্টেশনে যাবো। আমাদের মাওয়া স্টেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রেল চলাচলের জন্য টেকনিক্যালি আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের স্টেশন রেডি। লাইন রেডি করাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জনসভায় বড় ধরনের শোডাউন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা। নির্বাচনের আগে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করে দক্ষিণাঞ্চলে নিজেদের শক্তির মহড়া দিতে চায় দলটি। জনসভাকে সফল করতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হবেন বলে দলটির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গত বছরের ২৫ জুন। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সেতুটি দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া প্রান্তে পরীক্ষামূলক চলাচল করে ট্রেন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ট্রেনের ‘ট্রায়াল রান’ হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিতে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো হয় এবং পরের দিন চালানো হয় মালবাহী ট্রেন।

২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। আগামী বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এই রুটে নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তিনটি ট্রেন চলাচল করতে পারে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে।

অপরদিকে, রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে রেলওয়ে।

ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা, ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। খুলনা থেকে গোয়ালন্দ রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসের চলাচলের রুট বাড়িয়ে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পুরো রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর দিয়ে ট্রেন খুলনায় যেতে পারবে। একইভাবে রাজবাড়ী হয়ে উত্তরবঙ্গের পথেও ট্রেন চলতে পারবে। ভবিষ্যতে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।

রেল কর্মকর্তারা বলেছেন, শুরুতে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তিনটি স্টেশনে-মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচরে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকছে। অন্যান্য রেল স্টেশনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে তা চালু হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেললাইন নতুন করে চালু হলেও ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী হয়ে রাজশাহী ও খুলনাসহ বিভিন্ন রুটে ব্রডগেজ রেল ব্যবস্থা আগেই চালু রয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা-ভাঙ্গা রেলরুটের ভাড়া তুলনামূলক বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দূরত্বের জন্য আন্তনগর ট্রেনের নন-এসি ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এসি চেয়ারে ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৬৭ টাকা। বাসের চেয়ে এই পথে ট্রেনযাত্রীদের বাড়তি ভাড়া দিতে হবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

ভাড়া নির্ধারণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রেললাইনের স্বাভাবিক অংশে দেশে বিদ্যমান ভাড়ার হার ধরা হলেও পদ্মা সেতু অংশ এবং গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত সেতু ও উড়াল পথের জন্য অতিরিক্ত পথ যোগ করে ভাড়া বেশি ধরা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুকে মোট ১৫৪ কিলোমিটার রেলপথ ধরা হয়েছে। একে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। অপরদিকে গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার হিসাবে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়ালপথকে ১১৫ কিলোমিটার রেলপথ ধরা হয়েছে। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে আদায় করতে চায় ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া।

বর্তমানে রেলে কিলোমিটারপ্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তনগর-এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে ভাড়ার হার কিছুটা কম-বেশি আছে। এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনেও বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এগুলো হলো- শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি সিট ও এসি বার্থ। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আন্তনগরে তা ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। এই সেতুর ওপর রেললাইন বসিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে টোল দিতে হবে। তবে এখনও এই টোল হার নিয়ে একমত হতে পারেনি সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি। সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে