অনুমোদন থাকলেও আসেনি ডিম, সাধারণ মানুষের আতঙ্ক নিত্যপণ্যের দামে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৩; সময়: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ |
অনুমোদন থাকলেও আসেনি ডিম, সাধারণ মানুষের আতঙ্ক নিত্যপণ্যের দামে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জনমনে যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তার থেকে প্রকট আকার ধারণ করেছে নিত্যপণ্যের দাম। গতকাল সোমবার সকালে শান্তিনগর এলাকার অস্থায়ী বাজারে প্রয়োজনীয় শাকসবজি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী জয়নাল আবেদিন।

এ সময় মাছ ও সবজির দোকান ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের দাম জিজ্ঞেস করছিলেন তিনি ও তার প্রতিবেশীরা। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক দাম শুনে অস্বস্তি প্রকাশ করছিলেন। এ সময় তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে আলাপ করছিলেন।

এর মধ্যে একজন দোকানিকে বলে বসলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির থেকে জিনিসপত্রের দাম আরও বেশি আতঙ্ক লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে ধনী গরিব হয়ে যাবে, আর গরিব না খেয়ে মরবে।

গতকালও বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম ছিল কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বা তারও বেশি। প্রতি হালি (৪ পিস) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।

ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকায় উঠেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানি পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বা তারও বেশি দামে। যদিও গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা ঠিক করে দেয়।

যার কোনো একটিও এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ কিনতে পারেনি। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৫ কোটি ডিম আমদানির উদ্যোগ নিলেও তা এখন পর্যন্ত আসেনি।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, আলুর কেজি কোনোভাবেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দাম বাড়ানো হচ্ছে। যেজন্য সরকার আলু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।

এ ছাড়া বাজারে মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, প্রতি কেজি পাইজাম চালের ৫২ থেকে ৫৫ টাকা এবং মোটা চালের ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা হরতাল ও অবরোধের মধ্যে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক, বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছে ভোক্তা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

অন্যদিকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তিন দিনের অবরোধে পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

গতকাল সমিতির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারতে দাম বাড়লেও বেশি দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। বিপরীতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সংরক্ষণ থাকলেও আলুর দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টন। তবে কোল্ড স্টোরেজে ব্যবসায়ীরা সরকারি এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করছে।

তাদের মতে, গত মৌসুমে দেশে ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এ বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে সরকারকে আগাম উদ্বেগ জানানো হলেও সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি বলে দাবি করছেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তবে উৎপাদন যাই হোক, যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারের চাহিদা মোকাবিলা সম্ভব বলেও তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রতি কেজি আলুর পাইকারি মূল্য ২৭ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৬ টাকা হওয়া যৌক্তিক বলে তিনি মনে করেন।

পেঁয়াজের আমদানি পরিস্থিতি সম্পর্কে দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এম হারুন উর রশিদ বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত প্রতি টনে নতুন দাম ৮০০ মার্কিন ডলার বেঁধে দিয়েছে; কিন্তু নতুন দামের কোনো মাল এখনো দেশে আসেনি।

এখন যেসব মাল (পেঁয়াজ) আসছে, তা আগের ৫০ রুপির (প্রতি কেজি) এলসি করা। নতুন এলসির মাল আসতে দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তখন বন্দর খরচসহ প্রতি কেজির দাম হয়তো ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে আমরা আমদানিকারকরা ভারত সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করি না।

সে দেশের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ব্যবসা করি। সেক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাম কমারও সম্ভবনা রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত আমদানি না থাকলে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে, যাতে আমরা পর্যাপ্ত এলসি পেতে পারি।

কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পর্যাপ্ত এলসি থাকতে হবে। প্রতিদিন আমাদের চাহিদা ২০০ ট্রাকের বেশি; কিন্তু পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক মাল।

তাহলে বাজারে প্রভাব পড়বে না। যেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সহজ মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এলসি খোলার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

ডিম-মুরগির উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতির সম্পর্কে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ডিম ও মুরগি উৎপাদন হচ্ছে।

তবে পোলট্রি খাদ্য ও বাচ্চার দামের কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকার বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে দিলেও করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে সে দামে খামারিরা কিনতে পারছে না।

রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যকর থাকে না। এবারও তাই হবে। তবে সতর্কতা হিসেবে আমরা খামারিদের সংশ্লিষ্ট পণ্য পরিবহনের সামনে ব্যানার বাঁধার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি, পোলট্রিসামগ্রী রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতার বাহিরে থাকবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে