বদলগাছী রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৩; সময়: ৬:৩২ অপরাহ্ণ |
বদলগাছী রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী (নওগাঁ) : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহ ও আনুসাঙ্গিক বিলের অর্থ আত্নসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।

তিনি ২০ টি প্রশিক্ষণ ব্যাচ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৪০টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জনিয়েছেন প্রশিক্ষণার্থী ( শিক্ষক-শিক্ষিকারা)।

জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক উন্নয়ন কর্মসূচির (পিডিবি-৪) আওতায় ২০২৩-২৪ ইং অর্থবছরে সারাদেশের ন্যায় বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ৩ দিনব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম বিস্তারণ প্রশিক্ষণ গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। আর এই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নিন্মমানের প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদানসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অর্থ হাতিয়েছে ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) আমিনুল ইসলাম।

অনুসন্ধান ও বিল ভাউচার সুত্রে জানাযায়, প্রতিটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দিবে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী আর তাঁদের প্রতি জনের জন্য উপকরণ ধারা হয়েছে ১টি তথ্য প্রত্র ৩৮০ টাকা, রাইটিং প্যাড ৫০ টাকা, কলম ৪০ টাকা, নেমকার্ড ৫ টাকা, ৫০টি পোষ্টার পেপার যার মূল্য ২৫০ টাকা, ১০টি পেনসিল ১৫০ টাকা, ১০ রাবার ১০০ টাকা, ১০টি সার্ফনার ১০০ টাকা, ৫টি গাম আটা ১৫০ টাকা। মোট ১৫ হাজার টাকা। আবার প্রতি জন প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য একটি করে ব্যাগ যার মূল্য ৫০০ টাকা।
অপরদিকে আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ প্রতি ব্যাচে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫শত টাকা। সেখানে রয়েছে এ ফোর সাইজের এক প্যাকেট কাগজ যার মূল্য ৫৫০ টাকা, ফোটকপি দুই শত কপি ৬০০ টাকা, ২টি হারপিক ৩০০ টাকা, ৫ প্যাকেট ফেসিয়াল টিসু ৪০০ টাকা, ৬পি টয়লেট টিসু ১৫০ টাকা, ২টি হ্যান্ড ওয়াশ ৩০০ টাকা, ৪টি সাবান ২০০ টাকা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে ১টি করে তথ্যপত্র যার সর্বোচ্চ মূল্য ১১০ টাকা, ঔষুধ কোম্পানির ফ্রি কলম একটি করে যার মূল্য ৪০ টাকা , ৫ টাকা মূল্যের একটি নেমকার্ড, ডাক্তারদের ফ্রি দেওয়া ঔষধ কোম্পানির ১টি করে প্যাড যার মূল্য সর্বোচ্চ ২০ টাকা । সর্বমোট ১৭৫ টাকা মূল্যের উপকরণ। একটি ব্যাগ (মহিলা/পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীদের লেডিস এবং জেন্টস) যার মূল্য ৩০০ শত টাকা। সর্বোমোট ৪৭৫ র্টাকার প্রশিক্ষণ উপকরণ সরবরাহ করেছেন। এসব খাতে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য ব্যয় করা হচ্ছে মাত্র ৪৭৫ টাকা। এর সাথে সাড়ে ৭% সরকারি ভ্যাট ও ৩% আয়কর ৫০ টাকা যোগ করলে তা দাঁড়ায় ৫২৫ টাকা। অথচ একজন প্রশিক্ষণার্থীর সর্বমোট বরাদ্দ ব্যাগ ও উপকরণ মিলে (৫০০+৫০০)= ১ হাজার টাকা। কিন্তু কোন ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া হয়নি পোষ্টার পেপার, পেনসিল, রাবার, সার্ফনার ও গাম আটা।

অপরদিকে, আনুসাঙ্গিক বিল প্রতি ব্যাচে দুই হাজার পাঁচ শত টাকা করে উত্তলোন করলেও শুধু প্রতিটি প্রশিক্ষণে দিয়েছেন ১ প্যাকেট ফেসিয়াল টিসু টয়লেটে সাবান একটি, টয়লেট টিসু একটি ও করেছেন ৪০ কপি ফোটকপি। নাম মাত্র এসব জিনিস দিয়ে পুরো টাকাটায় করেছেন অত্নসাৎ।

প্রতিটি ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থী (শিক্ষক-শিক্ষিকা)দের এমন সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। উপকরণগুলো সাথে বরাদ্দের অর্থের মিল না হওয়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে চরমভাবে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে ৬০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর নিকট ও ২০ টি ব্যাচে থেকে তিনি ২ লাখ ৮৫ হাজার , অতিরিক্ত উপকরণ বাবদ ১৫ হাজার, আনুসাঙ্গিক খাতে ৪২ হাজার ৯৪০ টাকা। মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৪০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্নসাৎ করেছেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) আমিনুল ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা জানান, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষক নেতা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের ম্যনেজ করেই এ সকল অনিয়ম করছে ইন্সট্রাক্টর আমিনুল ইসলাম। আমিনুল ইসলামের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন উপজেলার শিক্ষকবৃন্দ।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকারা বলেন, বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রতিব্যাচে ৩০ জন করে ২০ টি ব্যাচে মোট ৬০০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য তথ্যপত্র, কলম, প্যাড, নেমকার্ড এর জন্য ৪৭৫ টাকা ও পেন্সিল, সার্ফনার, রাবার পোষ্টার পেপার, গাম আটার জন্য বরাদ্দ ৭৫০ টাকা এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য ব্যাগ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ টাকা। প্রতিদিন প্রতিজন প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী বাবদ ৫শ’ ও লান্স বাবদ বরাদ্দ আছে ২৮০ ও যাতায়াত বাবদ ২০০ টাকা বরাদ্দ ছিলো।

এবিষয়ে বদলগাছী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলাম বলেন, এবার উপর থেকেই উপকরণ বাবদ বরাদ্দটি ১ হাজার টাকা দিয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। নিন্মমাণের উপকরণ সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব জিনিস পত্র তিনি নিজেই ক্রয় করেছেন। তিনি প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের একটি করে ব্যাগ, ঔষুধ কোম্পানির একটি করে রাইটিং প্যাড, একটি ঔষুধ কম্পানির কলম, ১টি করে তথ্যপত্র ও নেমকার্ড সরবরাহ করেছেন তা আমিও দেখেছি। তবে এগুলো কত দিয়ে কিনেছে আমি সেটি বলতে পারবো না। এ ব্যপারে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনসট্রাক্টর ভালো বলতে পারবেন। তবে উপজেলাতে ২০টি ব্যাচে ৩০জন করে মোট ৬০০জন শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) আমিনুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বিষয়গুলি অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা ঠিক না। বলে ফোনে সংযোগটি কেটে দেন।

জেলা পিটিআই এর সুপারিনটেনডেন্ট খন্দকার মোঃ ইকবাল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, এ ব্যপারে পরে আপনি আমাকে ফোন দেন বলে সংযোগটি কেটে দেন। পরে ফোন দিলে তিনি বলেন, আপনি এখন আমার সাথে কথা বলে মজা পাবেন না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে