তানোরে বৃষ্টিতে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩; সময়: ৭:১২ অপরাহ্ণ |
তানোরে বৃষ্টিতে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা

সাইদ সাজু, তানোর : রাজশাহীর তানোরে ২ দিনের বৃষ্টিতে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, সদ্য রোপনকৃত আলুর যে জমিতে সেচ দেয়া হয়েছিলো সেই সব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। জমে থাকা পানি বের করতে না পারলে রোপনকৃত আলু বীজ পচে যাবে। ফলে, ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা। তবে, সেচ না দেয়া জমিতে রোপনকৃত আলুর কোন সমস্যা হবে না।

শুক্রবার সকালে বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেশীর ভাগ জমিতেই পানি জমে টইটুম্বর হয়ে রয়েছে আর সেই পানি বের করার জন্য মাঠ জুড়ে ব্যাস্থ্য রয়েছেন। তবে, অল্প সংখক জমিতে পানি জমেনি। কৃষকরা বলছেন, জমিতে আলু রোপনের ১০ দিন থেকে ১২ দিনের মধ্যে সেচ দিতে হয়। উপজেলার বেশির ভাগ জমি ১৫ দিন থেকে ২০ দিন আগেই রোপন করার পর সেচ দেয়া সম্পূর্ন হয়েছে।

অল্প কিছু জমি ৮ দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে রোপন করা হয়েছে। সেই রোপন করা আলুতে সেচ দেয়ার প্রস্তুতিও চলছিলো এর মধ্যেই ২ দিনের বৃষ্টির কারনে আর দেয়ার প্রয়োজন হবে না এবং এই বৃষ্টিতে কোন ক্ষতিও হবে না। অপর দিকে উপজেলার বেশ কিছু এলাকার অনেক জমিতে আলু রোপনের জন্য জমি তৈরি করা হয়েছিলো, সেই জমিতে এখন আর আলু রোপন করা যাবে না।

সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর গ্রামের কৃষক জামিল, সেলিম, রেজাউলসহ চাষীরা জমি থেকে পানি বের করার জন্য সকাল থেকে থালা, গামলা দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করছেন। জামিল বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আলু রোপন করেছেন, গত মঙ্গল ও বুধবারে সেচ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দিন রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারনে জমিতে প্রচুর পরিমানে পানি জমে গেছে। বের করার কোন ব্যবস্থা নেই। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে পানি বের না হলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

রেজাউল নামের আরেক কৃষক বলেন, ৩ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়ে প্রথম সেচ দেয়ার পর এমন মড়কে পড়েছি। সেলিম নামের আরেক কৃষক বলেন, আমার ৭ বিঘা ভায়ের ১২ বিঘা আলুর জমিতে থইথই করছে পানি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তবে লীজ নিয়ে যারা রোপন করেছেন তাদের খরচ আরো বেশি হবে।

ধানতৈড় গ্রামের আদর্শ আলু চাষী ও গোল্লাপাড়া বাজারের প্রসিদ্ধ কাপড় ও গার্মেন্স ব্যবসায়ী কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, এবছর যশপুর জমির মাঠে ১০৮ বিঘা জমি লীজ নিয়ে আলু চাষ করার পর কয়েকদিন আগে সেচ প্রদান করেছেন। বৃষ্টিতে সেই আলুর জমিতে পানি জমে গেছে। তিনি বলেন, পানি বের করতে না পারলে ক্ষতি হবে। পানি বের করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

পাঁচন্দর ইউপির কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ৪৫ বিঘা জমিতে সেচ দিয়েছিলাম। জমিতে প্রচুর পানি জমে আছে, কিন্তু বের করার কোন উপায় নেই। একই এলাকার হাবিবুরের ৩০ বিঘা, সেহেরুলের ১০ বিঘা, সারোয়ারেরে ৪০ বিঘাসহ প্রায় প্রতিটি কৃষকের আলুর একই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, যে সব চাষীরা সেচ নিয়েছিল তাদের সমস্যা। এমনকি দ্রুত জমি থেকে পানি বের না হলে পচে যাবে এবং ফলনও কম হবে। বিঘায় এখন পর্যন্ত নিম্মে ৪০ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৪৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, আলু রোপনে এবার সব চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। কারন জমি লীজ, সার কীটনাশকের বাড়তি দামের কারনে এতবেশী খরচ গুনতে হয়েছে। গত বুধবার সারাদিন সূর্যের আলোর দেখা নেই। রাত থেকে ও বৃহস্পতিবার দিন রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কারনে জমির প্রচুর পরিমানে পানি জমে আছে।

শুক্রবার সকালের দিকে মাঝে মাঝে সূর্যের আলো দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে মেঘলা আকাশ। প্রচন্ড খরতাপ হলে দ্রুত পানি সুখিয়ে যাবে, আর এরকম আবহাওয়া থাকলে আলু পচে নষ্ট হবে যেমন, ঠিক তেমনিভাবে ফলনের চরম বিপর্যয় ঘটবে। তবে আলু সর্বনাশ হলেও সরিষার জন্য উপকার হয়েছে।

মাহাম নামের এক কৃষক তার জমির ছবি ফেসবুকে দিয়ে বলেন কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস। তিনি আরো বলেন, আট বিঘা জমিতে আলু রোপন করার পর চারদিনের মাথায় সেচ দেয়া হয়। সেচ দেয়ার পরেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। একবার জমিতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখে আর যেতে ইচ্ছে হয়নি। আট বিঘায় প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত মৌসুমের লাভ দেখে আলু রোপন করে যেন পথে বসতে হল।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবারে আলু রোপনের লক্ষমাত্রা ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এপর্যন্ত রোপন হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। যে সব জমিতে সেচ দেয়া হয়েছিল ওই সব আলুর জমি ক্ষতি হবে। জমি থেকে দ্রুত পানি বের করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। পানি বের করতে না পরলে লোকসানের মুখে পড়বে চাষীরা। আর যারা সেচ নেয়নি তাদের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। এই বৃষ্টিতে সরিষাতে উপকার হবে বলেও জানান তিনি।

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে