আত্রাইয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আলু চাষ
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই : উত্তরাঞ্চলের শষ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার আলু চাষিরা এবার আলুর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রকৃতিতে আত্রাই উপজেলায় চলতি রবিশষ্য মৌসুমে এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি মাঠজুড়ে এখন শুধু সবুজ রঙের চোখ ধাঁধাঁলো বর্ণীল সমরাহ।
এ বছর রোপা-আমন ধান কাটার সাথে সাথে রবিশষ্যের উপযোগি চাষযোগ্য জমিতে কৃষকরা আগাম জাতের আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণসহ রাসায়নিক সার ও বীজ বিনা মূল্যে যথাসময়ে বিতরণ করায় এই উপজেলার কৃষকদের আগাম আলু লাগানো সম্ভব হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।
এবারে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং আলু চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আলুর পাশাপাশি সরিষা, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবিশস্য মৌসুমে এবারে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ২ হাজার ৭শত ২০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে আলু চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে আলুক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, মনিয়ারী ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষক মুনিরুল ইসলাম জানান, আমি এ বছর ৫বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। হিমাগারে কিছু বীজ রেখেছিলাম আর বাঁকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। আলু গাছ ভালো হওয়ায় মনে হচ্ছে এবার আলুর আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল হলে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।
উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, দুর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।
উপজেলার তারাটিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, শুরুতেই আলুর ক্ষেতে নানা ধরনের পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতা দিয়ে আসছি। বর্তমানে আলু ক্ষেতে প্রায় শতভাগ রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছি।
উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শলিয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কে এম মাহাবুব বলেন, যথা সময়ে জমি আলু চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা সুযোগ বুঝে আলুর আবাদ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতি না হলে এবার আলুর বাম্পার ফলন হবে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপশ কুমার রায় বলেন, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে আলুর আবাদ করেছে। আলুর রোগ দমনসহ কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। #