হঠাৎ বৃষ্টিতে আলু পচনের শঙ্কায় চাষিরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪; সময়: ১২:২৪ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
হঠাৎ বৃষ্টিতে আলু পচনের শঙ্কায় চাষিরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শীতের শেষে বৃষ্টিপাত আলুর জন্য বরাবরই ক্ষতিকর। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত হঠাৎ বৃষ্টিতে বগুড়ার অধিকাংশ আলুর জমি ভিজেছে।

আলু উত্তোলনের শেষ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়ে বলছেন, বৃষ্টিপাত হলেও কোথাও পানি জমেনি। ফলে আলু পচে যাওয়া নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

বগুড়া জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর আর কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।

আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার বগুড়ায় ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। যেখান থেকে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ শতাংশ আলু উত্তোলন করেছেন কৃষকরা। বেশির ভাগ আলু জমিতেই রয়েছে।

ফলে মাঘের শেষে ফাল্গুন মাসে হঠাৎ বৃষ্টি আলু চাষিদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সময়ে সব আলু চাষিরা মাঠে থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত।

কিন্তু বৃষ্টি হলে আলু উত্তোলন বন্ধ করতে বাধ্য হয় কৃষকরা। আবার আলু মাঠে থাকলেও পানিতে জমে পচে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার সরাই গ্রামে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এই গ্রামের কৃষক আইয়ুব প্রামানিক বলেন, আমি দু-একদিনের মধ্যে আলু তুলে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু হঠাৎ করে গত রাতে বৃষ্টি হয়ে জমিতে পানি জমে গেছে। এখন এই পানি না শুকানো পর্যন্ত আলু উত্তোলন করতে পারব না।

তাছাড়া জমিতে পানি জমে যাওয়ার কারণে আলু পচে যেতে পারে। এই আলুগুলো আর সংরক্ষণও করতে পারব না।

একই উপজেলার এরুল গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের আড়াই বিঘা জমিতে স্টিক জাতের আলু তোলার সময় হয়ে গেছে।

বৃষ্টিপাতে সাময়িক সমস্যা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে শৈত্যপ্রবাহে আলুতে মড়ক লাগায় অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। তাই এবার বৃষ্টি দেখে প্রথমে ভয় লেগেছিল। কিন্তু মাটি সব পানি টেনে নিয়েছে। জমে থাকলে আলুর ক্ষতি হতো।

শিবগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর নয়াপাড়ার আলু চাষি আজমল হোসেনেরও একই কথা। তিনি বলেন, আমাদের এখানকার মাটিতে পানি জমে না।

তবে বৃষ্টি দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হলে আলুর জন্য খারাপ হতো। কারণ এখন সবাই মাঠ থেকে আলু তুলছে।

আবার যারা আগেই তুলে ফেলেছে তাদের জন্য এখন বৃষ্টিপাত খুবই দরকার। কারণ তারা ধানের আবাদ করছেন।

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখানেও বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মাটি দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ হওয়ায় বৃষ্টির পানি মাটিতেই শুকিয়ে গেছে।

চামরুল ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের এমদাদ হোসেন বলেন, প্রতি বছর তিন বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করি। আলু আজই (সোমবার) উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় আরও এক বা দুই দিন মাঠে রাখব। পানি যেহেতু জমেনি তাই আশা করছি আলুতে পচন ধরবে না।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, এই উপজেলার মাটি ভালো। এখানে সাধারণত পানি জমে না।

জেলার মধ্যে শিবগঞ্জে যেহেতু বেশি আলু চাষ হয় তাই বৃষ্টির পরপরই আমরা খোঁজ নিয়েছি। কোথাও পানি জমেনি।

আর এই উপজেলায় তেমন বৃষ্টিপাতও হয়নি। ফলে আলু নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বৃষ্টিপাতে জেলায় আলুর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলবুর রহমান বলেন, জেলার সব এলাকায় একই সমান অনুপাতে বৃষ্টিপাত হয়নি। এই বৃষ্টিপাত যদি আর না হয় তাহলে আলুর জন্য ক্ষতির কারণ হবে না।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে