যে ৯ সময়ে নিশ্চিত দোয়া কবুল হয়
আব্দুল ওহাব : দোয়া ইবাদতের মূল। মানুষের ভাগ্য তার প্রচেষ্টা ও দোয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। যেমন হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। (তিরমিজি, হাদিস ২১৩৯)
দুনিয়ার কোন মানুষের কাছে যদি আমরা কিছু চাই তখন তিনি রাগ বা বিরক্ত হোন, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এত বেশি দয়ালু যে, তার কাছে কিছু চাইলে তিনি খুশি হন। এমনকি না চাইলে তিনি রাগ করেন।
যেমন হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন। (তিরমিজি, হাদিস)
এছাড়াও স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই তার কাছে চাওয়ার জন্য এবং যা চাইব তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে যেমন তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। (সুরা মুমিন, আয়াত ৬০)
অন্যত্র বলেন, হে রাসুল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
দোয়া করা বড় উপকারী ইবাদত। কাজেই এই উপকারী ইবাদত তথা দোয়া কবুলের কিছু বিশেষ সময় রয়েছে। যে-সব সময়ে দোয়া করলে দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়।
দোয়া কবুলের উত্তম সময়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:-
১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে কবুল করা হয়
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নীচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো, আমাকে ডাকো; আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, আমার কাছে চাও; আমি তোমাকে দান করবো। কে আছো? আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী; আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম- ১২৬৩)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, শেষ রাতের যে কোনো সময় কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে পৃথিবী বা পরকালের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল আর তাকে তা দেওয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে। (মুসলিম, ১২৫৯)
২. শুক্রবার জুমার দিনের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পূরণ করবেন। এবং তিনি তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। (বুখারি)
সুনানে আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় রয়েছে, ‘আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত।’ আবার সহিহ মুসলিম শরিফের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময়, ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।’
৩. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (আবু দাউদ)
৪. সেজদার মাঝের দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়, তাহলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও। (মুসলিম- ৭৪৪)
৫. রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘৩ ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। ন্যায় পরায়ণ শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি)
৬. কদরের রাতের দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি)
৭. আরাফাতের দিনের দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া। (তিরমিযি)
৮. বৃষ্টির হওয়ার সময়ের দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ-২১৭৮)
৯. ফরজ নামাজের পরের দোয়া
সাহাবি হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে। (তিরমিজি, ৩৪২১)
এছাড়াও নির্যাতিত অবস্থায়, রোগে আক্রান্ত অবস্থায়, বিপদ-আপদের সময়, দূরবর্তী সফরের সময়, সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া খুব বেশি কবুল হয়। সুতরাং আমাদের সবার উচিত উল্লিখিত সময়সহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও আল্লাহকে স্মরণ করা।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়