রাজশাহীতে বিরল রোগে একই পরিবারের ছয়জন আক্রান্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৪; সময়: ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে বিরল রোগে একই পরিবারের ছয়জন আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিরল রোগের শিকার হয়ে আঙুলের ছাপ নেই একই পরিবারের ছয় সদস্যের। এই নিয়ে তাদের পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিশ্বে এ রোগে মাত্র চারটি পরিবার শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুঠিয়ার পরিবারটিও।

জানা গেছে, এটি একটি বংশগত রোগ। এ রোগ হলে হাতের ছাপ থাকে না। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কর্মকাণ্ড এখন ডিজিটাল হওয়ায় এ রোগে আক্রান্তদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এক যুগ আগেও নানা কাজে আঙুলের ছাপ তেমন একটা প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু গত এক দশক ধরে আঙুলের ছাপের ব্যাপক ব্যবহার দেখা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে।

বিরল এ রোগে আক্রান্ত কৃষক অমল সরকার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন। তিনি বলেন, আমার বাবা ও দাদা এই বিরল রোগে আক্রান্ত। আমরা দুই ভাইও এই রোগ নিয়ে জন্মছি। বড় ভাই গোপেশ সরকার দিনাজপুরের একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তার হাসপাতালে যখন কর্মচারীদের হাজিরার জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু হয় তখন তিনি কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে পুরোনো পদ্ধতিতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করান।

আমার বড় ভাই এ রোগের কারণে দুই বছর অপেক্ষা করার পর সম্প্রতি তার নিজ নামে পাসপোর্ট পেয়েছেন। আমার পাসপোর্টের জন্য বেশ কয়েকবার ঢাকায় যেতে হয়েছে শুধু আঙুলের ছাপ সমস্যা অবহিত করতে। আমার মোটর বাইক থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আমি বাইক রেজিস্ট্রেশনের ফি জমা দিয়েছি। অথচ, আঙুলের ছাপ না থাকায় আমাকে কর্তৃপক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স এখনো পর্যন্ত দেয়নি।

অমল সরকারের বড় ছেলে ২২ বছর বয়সি অপু সরকার বলেন, আমার বাবার এই রোগ বংশানুক্রমে আমি ও আমার ছোট ভাই পেয়েছি। এমনকি আমার দুই জ্যাঠা ও বড় জ্যাঠার ছোট ছেলেও এই রোগের শিকার হয়েছে। আমার হাতের আঙুলের সমস্যার জন্য জীবন অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অপু সরকার বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু হয়, তখন থেকে আমার পরিবারের বিড়ম্বনা শুরু।

অমল সরকার যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য বারবার আঙুলের ছাপ দিতে ব্যর্থ হন তখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না বিষয়টি কি? পরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এনআইডি কার্ডে (জাতীয় পরিচয়পত্র) লেখা হয় আঙুলের ছাপ নেই। এরপর থেকে সমস্যা শুধু বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে যখন মোবাইল সিম কার্ডের জন্য আঙুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করা হয় তখন নতুন করে বিড়ম্বনার মুখে পড়েন তারা।

অপু সরকার বলেন-আমি, আমার বাবা ও ছোট ভাই তিনজন বর্তমানে আমার মায়ের নামে তোলা সিম কার্ড ব্যবহার করছি। অপুর ছোট ভাই অনু সরকার বলেন, আমার বয়স ১৭ বছর। শুধু আঙুলের ছাপ না থাকায় বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

অপু সরকার বলেন, আমার ও পরিবারের এ সমস্যার বিষয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ইটিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ২০০৭ সালে এক সুইস নারী আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে বারবার সমস্যায় পড়ার পর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইটিনের শরণাপন্ন হন। সেটিই ছিল তার কাছে এ ধরনের প্রথম কোনো রোগী। পরে একদল গবেষক ওই নারীর পরিবারের ১৬ জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ রোগের বংশগত সমস্যার কারণটি খুঁজে বের করে। গবেষক দলটি এই রোগের নাম দেন অভিবাসন বিলম্ব রোগ বা ইমিগ্রেশন ডিলে ডিজিজ।

২০১১ সালে সুইজারল্যান্ডের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইটিন এবং আরও কয়েকজন গবেষক এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ওই গবেষণায় তারা এই বংশগত বা জেনেটিক সমস্যার জন্য দায়ী জেনেটিক মিউটেশনটি শনাক্ত করেন। তাদের গবেষণার সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ রোগে মোট চারটি পরিবার শনাক্ত হয়েছিল, যারা বংশগতভাবে এ সমস্যায় ভুগছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে