এনায়েতপুরে ইভটিজিং মামলার আসামীর বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪; সময়: ৮:১৯ অপরাহ্ণ |
এনায়েতপুরে ইভটিজিং মামলার আসামীর বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনা মামলায় হতে বাঁচতে ইভটিজিং মামলার আসামী এবং তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বাদী এবং তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ এনে ঢাকায় ষড়যন্ত্র মূলক সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। এতে ইভটিজিং এর প্রতিবাদ এবং দায়ীদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও এ চক্রটি মানহানীকর অশ্লীল বক্তব্য পেশ করেছে। এ ঘটনায় প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক সমাজ সহ এলাকা জুড়ে সর্বমহলে আরো নিন্দার ঝড় তুলেছে। দাবি উঠেছে ইভটিজিং মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা সহ তাদের পক্ষ নিয়ে এলাকা জুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা দলের অন্য নেতাদেরও দল থেকে বহিষ্কারের।

পুলিশ ও ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী এনায়েতপুর আই সি এল স্কুলের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী খোকসা বাড়ি গ্রামের বখাটে আজিজুল ইসলাম হৃদয়ের দ্বারা উত্ত্যক্তের শিকার হন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার বাবা বাবু মির্জা দফায় দফায় তাদের স্বজন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দ্বারা হামলার শিকার হন। সেদিন রাতেই পুলিশ ওই বখাটে হৃদয় সহ স্থানীয় যুবলীগ নেতা রোকন ভূঁইয়া, তার বড় ভাই এক সময়ের রাবির শিবির নেতা বর্তমান এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও খামারগ্রাম ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক রাশেদ উদ্দিন ভুঁইয়া, সহযোগী আশরাফুল ইসলামকে আটক করে। পরদিন তাদের পক্ষ নিয়ে তাদের আত্মীয় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাশেদ ইসলাম সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকার জামাতের নাশকতা মামলার অভিযুক্ত আসামী আমিনুল ইসলাম আলামিন ওরফে লাল বাবু, থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রফেসর বদরুল রশিদ, ঘুগনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান আলী মিয়ার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল সড়ক অবরোধ করে আসামী ছিনিয়ে নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে প্রতিবাদ ও সংবাদ প্রকাশ করায় মামলার বাদি বাবু মির্জার ভাতিজা একুশে টেলিভিশনের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি স্বপন মির্জা ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে দেখে নেয়া ও এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদকর্মী স্বপন মির্জা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একসময়ের জামাত নেতা আমিনুল ইসলাম আলামিন ওরফে লাল বাবুর বিরুদ্ধে জিডি করেন।

পরে এ চক্রটি আবারও পুলিশী বাধা অতিক্রম করে থানা পুলিশ মামলার বাদী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসব ঘটনায় সর্ব মহলে ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠে। দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

এরপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে বাদী এবং তার স্বজনরা দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করায়, রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে। এ সময় ইভটিজিং মামলার আসামী এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া, আশরাফুল ইসলাম, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী, সহ-সভাপতি বজলুর রশিদ, খুকনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান আলী মিয়া উপস্থিত ছিলেন। তখন উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইভটিজিং মামলার আসামী কলেজ শিক্ষক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা। আমাদেরকে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আসামি দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে মামলার বাদী বাবু মির্জা এবং তার ভাতিজা স্বপন মির্জা নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত। স্বপন মির্জা স্কুল এবং মন্দিরের জায়গা দখল করে শহীদ মিনার এবং শহীদ মিনার বাগান করেছেন। এছাড়া বাবু মির্জা ও স্বপন মির্জার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কে রাজাকার বলা সহ আরো নানা মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপনা করেন।

এসব বিষয়ে মামলার বাদী বাবু মির্জা বলেন, আমাদের নানা রকম চাপ সৃষ্টি ভয় ভীতি দেখিয়েও ইভটিজিং মামলা আপস মীমাংসা না করায় এবার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। আমার ও আমার ভাতিজা সাংবাদিক স্বপন মির্জার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সব ভিত্তিহীন। মূলত মামলা থেকে বাঁচতেই তারা অপকৌশল হিসেবে এই সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমার ভাতিজা স্বপন মির্জা একজন মানবিক সামাজিক সৎ সাংবাদিক। তার উপার্জিত অর্থে এলাকায় একটি শহীদ মিনার এবং বাগান করে দিয়েছেন এলাকার সবাইকে সাথে নিয়ে। এজন্য দেশজুড়ে তিনি প্রশংসাও করিয়েছেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা। আমরা দেশপ্রেমিক এই সূর্য সন্তানদের নানাভাবে সম্মানিত করে এসেছি অতীত থেকেই। অথচ সাজানো অভিযোগে আমরা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে কথা বলেছি। আমরা চাই দ্রুতভাবে মামলার সুস্থ তদন্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হোক। এছাড়া আমরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ভুগছি।

গোপীনাথপুরে শহীদ মিনার ও শহীদ মিনার বাগান নির্মাণ প্রসঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এবং গোপীনাথ পুর সার্বজনীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুধাংশু রায় বলেন, একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক স্বপন মির্জা একজন মানবিক স্বচ্ছ মানুষ। তিনি নিজের জমানো ও কিছুটা সরকারী বরাদ্দে আমাদের সবাইকে নিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার ও বাগান করেছেন। তা নিজের স্বার্থের জন্য নয়, দেশমাতৃকার টানে সামাজিক ভিত্তিতে ১৩-১৪ লাখ টাকা খরচা করে। কোন জায়গা দখল করে নয়, স্কুলের প্রতিষ্ঠান এগুলো। আমরা সম্মিলিতভাবে তাকে নিয়ে গ্রামের সবাই দেখভাল করি। সারা বছর আলোকিত রাখতেও তিনি বেশ টাকা-পয়সা খরচা করেন। এছাড়া স্বপন মির্জা এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান, মন্দির তৈরিতেও অক্লান্ত পরিশ্রম ও আর্থিক সহযোগিতা করেন।

এদিকে সাজানো সাজানো সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খুকনী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মাস্টার বলেন, এলাকার আলোচিত ঘটনার দায়ের মামলা হতে বাঁচতে ঢাকায় মিথ্যা বানোয়াট সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যদি অপমানজনক কথা বলতো তাহলে আমরা অবশ্যই জানতাম। এলাকায় স্বপন মির্জারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমি জেনেছি ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রশিদ ও শাহজাহান আলী মিয়া দুজনেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি।

এদিকে এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইভটিজিং এর ঘটনার দায়ের করা মামলা টি যদি মিথ্যা হয় তাহলে প্রমাণ করে দেখাক। সিরাজগঞ্জে সকল মানুষ, সাংবাদিক সবাই জানে ঘটনাটি কি। তারা এসে প্রমাণ করুক। সিরাজগঞ্জে সাংবাদিক সম্মেলন করলে তাদের মুখোশ উন্মোচন হতে বলেই ঢাকায় এ বানোয়াট সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।

অপরদিকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক জানান, আলোচিত ইভটিজিং ঘটনায় দায়ের কৃত মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়া মোটেও থানা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কাজ হয়নি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নারীদের সর্বোচ্চ অধিকার দিয়ে ইভটিজিং কারীদের শাস্তির আওতায় আনতে জনমত গঠন করেছেন। সেখানে দলীয় নেতাদের এভাবে ভাইদের পক্ষে অবস্থান নেয়া সমচীন নয়। তাদেরও দলীয় ভাবে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে