সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হচ্ছে পরিবার : প্রফেসর আসাবুল হক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪; সময়: ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ |
সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হচ্ছে পরিবার : প্রফেসর আসাবুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : প্রফেসর আসাবুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর। ১৯৯৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করা প্রফেসর আসাবুলের জন্ম চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামে। ৩০ বছর শিক্ষকতা জীবনে নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন নানা অর্জন।

প্রফেসর আসাবুল হকের একটি লেখায় প্রকাশ পেয়েছে তার শৈশবের কথা- “সন্ধ্যা হলে ঘরে ঘরে কুপি আর হারিকেন জ্বলে যে গ্রামে, কৃষকের ছেলেমেয়েরা কৃষক হবে- এ ধ্যান-ধারণা পোষণ করে যে গ্রামের মানুষেরা সেই গ্রামই আমার গ্রাম।

সেই গ্রামের অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বা স্বপ্ন নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন। তাই কৃষক পরিবারের ছেলে কৃষক হবে এটাই ছিল বাবা-মার স্বপ্ন।

ওই বয়সে স্বপ্ন কি তা বুঝতাম না। তবে যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্লাস ফাইভ পাশ করে ফেললাম। ভর্তি হয়ে গেলাম দামুড়হুদা পাইলট হাই স্কুলে।

১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাস। হাই স্কুল জীবন শুরু হলো। ফয়েজ স্যার দায়িত্ব নিলেন গণিতের মতো জঠিল ও কঠিন শাস্ত্রের। তিনি প্রতি সপ্তাহে পচিঁশ নম্বরের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নিতেন।

পঁচিশে পঁচিশ পাওয়া ছিল অন্যরকম এক আনন্দ। তখন থেকে অংককে ভালোবেসে ফেললাম। সেই ভালোবাসার ব্যাসার্ধ স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পর্শ করল।”

গোবিন্দহুদা গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া প্রফেসর আসাবুল হক পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাইদের সবার ছোট। তিনি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৮৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক ও ১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।

গণিতের প্রতি ভালোবাসায় প্রফেসর আসাবুল হক ১৯৯৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

পরে তিনি ১৯৯৭ সালের আগস্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়ে ১৯৯৮ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০০৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৮ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।

প্রফেসর আসাবুল হক ২০০২ সালে জাপানের তোয়োহাশি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (টিইউটি) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি, ২০০৮ সালে একই ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-ডক্টরেট এবং ২০০৯ সালে হামবোল্ট রিসার্চ ফেলোশিপ নিয়ে পোস্ট-ডক্টরেট করেছেন জার্মানীর টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি অব ব্রোঞ্চওয়েগ থেকে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রফেসর আসাবুল হকের লেখা প্রায় ৬৫টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াটার ওয়েভস, সেডিমেন্ট ট্রান্সপোর্ট, ক্লাইমেট চেন্জ ও জিওফিজিক্যাল ফ্লুইড ডায়নামিকস অ্যান্ড বায়ো ম্যাথমেটিকস প্রভৃতি তাঁর গবেষণার বিষয়। তাঁর সুপারবিশনে ইতিমধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি, ২ জন এম ফিল এবং বিশের অধিক গ্র্যাজুয়েট রিচার্স থিসিস/প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছেন।

প্রফেসর আসাবুল হক গণিত বিষয়ক বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দেয়ার পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে পত্রিকায় (প্রথম আলো, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ডেইলি বাংলাদেশ ) একশোর অধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লেখা-

বিদেশের মাটিতে শহীদ মিনার নির্মাণ, ভাল খবর মন্দ খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার, আমার শিক্ষক আমার আদর্শ, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পকেট কাহিনী, শিক্ষানীতি ও শিক্ষকের মর্যাদা, খাম্বা কাহিনী, স্যার, আপনারা শিক্ষক এ পরিচয় কেন দিলেন?, স্বপ্নের ব্যাসার্ধ এতো ছোট কেন, স্বীকৃতি মেলেনি চুয়াডাঙ্গার আব্দুল মালেকের, গাধা পিটিয়ে মানুষ করার গল্প, ৫২-৭১ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে প্রফেসর আসাবুল হক ২০১২ থেকে ২০১৫ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ, ২০১৬ থেকে ২০১৭ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ২০২২ থেকে চলমান প্রক্টর ও ২০২৪ থেকে চলমান গণিত বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের নির্বাচিত সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বর্তমান স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

সাধারণ জীবনকে অসাধারণ কিছু সফলতা উপহার দিয়েছেন তিনি। সফলতার পেছনে কারণ জানতে তিনি বলেন, সফল হতে পেরেছি কিনা জানিনা তবে শত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমি চেষ্টা করেছি। আর এ সাহসটা পেয়েছি আমার পরিবার থেকে।

আব্বা সবসময় বলতেন যে, তুমি পড়াশোনা কর। আমাকে কখনও তিনি টিউশনি করাতে দেননি। আব্বা শিক্ষিত মানুষ ছিলেন তবে কোন চাকরি করেননি।

এলাকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি পরিশ্রম আর একাগ্রতা দিয়ে লেগে থাকা যায় তাহলে কোন কিছুই অসম্ভব না। একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হচ্ছে তার পরিবার।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে