রমজানের শেষ সময়ের আমল

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪; সময়: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
রমজানের শেষ সময়ের আমল

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মাহে রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এ সময় অধিক ইবাদত-বন্দেগি করার গুরুত্বপূর্ণ সময়। রমজানের অফুরন্ত রহমত বরকত আর মাগফিরাত লুফে নিতে হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসূল (সা.) তার লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বোখারি : ১৮৯৭, মুসলিম : ২৬৫৮)।

তাহাজ্জুদ আদায় করা : রমজান তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মোক্ষম সময়। সেহরিতে উঠে আমরা সবাই এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। রাসূল (সা.) সারা বছর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানের শেষ দিকে তাহাজ্জুদের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে নামাজ পড়তেন। হজরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত।

তিনি হজরত আয়েশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করেন, রমজান মাসে রাসূল (সা.)-এর নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূল (সা.) রমজান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) ১১ রাকাতের অধিক নামাজ আদায় করতেন না। তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকাত বিতির নামাজ আদায় করতেন। (বোখারি : ১০৮০)।

ইতিকাফ করা : রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাত। ২১ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত নারীরা ঘরে এবং পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ করতে বসে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তার ওফাত পর্যন্ত এ নিয়ম ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বোখারি : ১৮৯৯।

লাইলাতুল কদরের তালাশ : লাইলাতুল কদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ জন্য এ রাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন ইবাদত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। হাদিসে লাইলাতুল কদরের অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদর তালাশের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (বোখারি : ১৮৯৩)। ইতিকাফকারী ব্যক্তির ভাগ্যে সহজে লাইলাতুল কদর নসিব হয়।

বেশি বেশি দোয়া করা : রমজানে দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগ। ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর দোয়া কবুল হয়। শেষ দশকের প্রত্যেকটি রাতে গুরুত্বের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহতায়ালা প্রতি শেষ রাতের ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছ এমন, যে আমাকে ডাকবে আমি তাকে সাড়া দেব।

কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে তা দেব। কে আছ এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? (বোখারি : ১০৭৮)। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) রমজানে চারটি কাজ বেশি করতে বলেছেন, তার মধ্যে দুটি হলো-এক. আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা, দুই. জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া। (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭; বায়হাকি : ৩৬০৮)।

ইস্তেগফার করা : রমজানের শেষ দশককে বলা হয় নাজাত। এ সময় অধিক পরিমাণে তাওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নাজাত অর্জন করে নিতে হয়। তাওবার অশ্রু জলে অতীতের পাপরাশি ধুয়ে মুছে নব উদ্যমে জীবন সাজাতে হয়। রমজান পাওয়া সত্ত্বেও মাগফিরাত না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ আমার ওপর দরুদ পাঠ করল না। ওই ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যার জীবনে রমজান মাস এলো; কিন্তু তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত না করেই তা অতিবাহিত হয়ে গেল। ওই ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতাকে (বা তাদের একজনকে) বৃদ্ধাবস্থায় পেল; কিন্তু তাদের খেদমত করার মাধ্যমে সে জান্নাতি হতে পারল না। (তিরমিজি : ৩৫৪৫, আল-আদাবুল মুফরাদ : ৬৪৬)।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে