নাটোরে সম্ভাব্য প্রার্থীকে মারধরের ঘটনায় মামলা, ২ জন আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ সহ মারপিটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেছেন দেলোয়ারের বড় ভাই মুজিবুর রহমান। ওই মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুমন ও বাবু নামে দুইজনকে আটক করেছে। এদিকে দুর্বৃত্তদের মারপিটে গুরুতর আহত সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) নেয়া হয়েছে।
দেলোয়ারে অপর বড় ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তার ভাইয়ের জ্ঞান ফেরেনি। দুবৃত্তদের মারপিটে গুরুতর আহত দেরোয়ারকে সোমবার রাতে অচেতন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করার পরকর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শে সোমবার মধ্য রাতের দিকে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
মামলার বাদি মুজিবুর রহমান জানান, সোমবার নাটোরে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে আসার পর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলের সমর্থকরা তার ভাই দেলোয়ারকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট করেছে। সেমবার বিকেল ৪ টার দিকে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে কয়েকজন যুবক দেলোয়ার হোসেনকে কিল ঘুষি মারতে মারতে জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা পর দেলোয়ারকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রামের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার মনোনয়ন পত্রের জন্য ব্যাংকে জমাদানকৃত টাকার রশীদ জমাদিতে গেলে তার ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সিকে একই এলাকা থেকে ৫ /৭ যুবক একটি মাইক্রোতে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের দুজনকে সিংড়া পৌর মেয়রের কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়।
সাক্ষাতকারে দেলোয়ার বলেছেন, এসময় তার মোবাইলে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রুবেলের সমর্থকরা তাকে তার মোবাইল ফোনে কোথায় আছি জানতে চায় এবং সিংড়া পৌর সভার কার্যালয়ে যেতে বলে। বার বার ফোন করার কারনে তিনি তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এসময় তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষটি পুলিশকে জানান।
স্বাক্ষাতকারে দেলোয়ার অভিযোগ করে বলেন, এর আগে লুৎফুল হাবিব রুবেল একাধিক দিন তাকে নির্বাচন না করার অনুরোধ করেন এবং বলেন তাকে যেন একবার সুযোগ দেয়া হয়। তার সমর্থকরাও বিভিন্ন সময় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেন । এমনকি ঈদুল ফিতরের আগে ঢাকায় যাওয়ার সময় তার পিছু নেয় রুবেল সমর্থকরা। তারা নির্বাচন না করার হুমকি দিয়ে আসেন।
দেলায়ার হোসেন তার প্রতিদ্বন্দ্বি আইিসিটি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও প্রতিমন্ত্রী পলক সম্পর্কে বলেন ,তিনি একজন নিরপেক্ষ মানুষ। তিনি কখনও নির্বাচন প্রসংগে বা তার শ্যালক রুবেলের পক্ষে নিয়ে কোন কথা বলেননি। বরং ফোন করে তার কুশল জানতে চেয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। তবে রুবেল খালি মাঠে বিজয়ী হওয়ার জন্য তার লোকজন দিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা না দেয়ার জন্য বলতেন। এক তরফা নির্বাচন করতে তাকে নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত লুৎফুল হাবিব রুবেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন।
তবে দেলোয়ারের ভাই এমদাদুল হক ও আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরনের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি তাদের।
সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ট্রিপল নাইনে করা এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পৌরসভায় এসে অনুসন্ধান করে এবং এর কোন সত্যতা না পেয়ে তারা ফিরে যান। অভিযোগটি সঠিক ছিলনা।
সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ট্রিপল নাইনে এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সিংড়া পৌর সভায় গিয়ে তল্লাসী বা অনুসন্ধান করে কোন সত্যতা পায়নি। অযিান শেষে পুলিশ পৌর সভার কার্যালয় থেকে ফিরে আসে এবং পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শি স্থানীয় দুই জন গণমাধ্যম কর্মীর দেয়া তথ্যে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ৬/৭ জনের একদল যুবক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসের ভিতরে যায়। এসময় তারা সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মারপিট করতে করতে নিয়ে এসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনের সামনে রাখা কালো রংয়ের মাইক্রোতে তুলে নিয়ে বগুড়া মহাসক হয়ে সিংড়ার দিকে যায়।
এসময় আর একটি গাড়ি ওই মাইক্রোর পিছনে ছিল। এঘটনার প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর দেলোয়ার হোসেনকে মুমুর্ষ অবস্থায় তার গ্রামের বাড়ি সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রামের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়।এই অপহরণের বিষয় আলোচনায় আসার পর জেলা কালেক্টরেট ও জেলা নির্বাচন অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সিসিটিভি ফুটেজে সিংড়া উপজেলা স্বে”ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীদের দেখা যায়। যারা লুৎফুর হাবিব রুবেলের সমর্থক বলে জানা গেছে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার খবর ও ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর পরই পুলিশ আহত প্রার্থীর মেজ ভাই মজিবুর রহমানকে সদর থানায় ডেকে নেয়। পরে তিনি বাদি হয়ে সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। পরে তা নথিভুক্ত করে এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। তবে মামলার এজাহারে আসামীদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওই মামলা দায়েরের পর পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুমন ও বাবু নামে দুই জনকে আটক করে।
সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ সুপার ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। সোমবার রাতেই দেলোয়ারের ভাই মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে মামলা করেছেন। এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ না থাকলেও কোন সমস্যা হবেনা। ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নম্বর ও মালিকানার তথ্য এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। ফুটেজ পরীক্ষা করে আসামিদের শনাক্ত করা হবে।