সুপেয় পানির সংকটে চট্টগ্রাম, ওয়াসার পানিতে লবণ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪; সময়: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ |
সুপেয় পানির সংকটে চট্টগ্রাম, ওয়াসার পানিতে লবণ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কাপ্তাই হ্রদ থেকে স্পিলওয়ে দিয়ে পানি ছাড়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেই পানি কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে মিশে গিয়ে সাগরের পানিকে উজানের দিকে যেতে বাধা দেয়। এভাবে নদীর পানিকে লবণাক্ততা থেকে রক্ষা করে হ্রদের পানি। আর এই পানি পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় সেভাবে পানি ছাড়া হচ্ছে না। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। ফলে সাগরের পানি উজানে উঠে আসায় নদীর পানিও মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।

এমনিতেই সংকটের কারণে অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবার এখন যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা লবণের কারণে মুখে তোলা যাচ্ছে না। প্রতিবছর গ্রীষ্মে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এবার গ্রীষ্ম শুরু হতে না হতেই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বাড়ছে পানিতে লবণের মাত্রা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

এদিকে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের চারটিই বন্ধ রয়েছে। ২৩০ মেগাওয়াটের পাঁচটি ইউনিটের ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউনিট চালু থাকলেও তা থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

বৃষ্টি হলেই কেবল বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করে চট্টগ্রাম ওয়াসা ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এজন্য বৃষ্টির আশায় আকাশের পানে চেয়ে আছেন তারা। চট্টগ্রামে সুপেয় পানি সরবরাহকারী সংস্থা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি লবণমুক্ত করা যায়। কিন্তু এটা খুব ব্যয়বহুল। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। তবে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনতে গভীর নলকূপ থেকে পাওয়া পানি কর্ণফুলীর পানির সঙ্গে ‘ব্লেন্ড’ করে লবণের মাত্রা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রেখে সরবরাহ করা হচ্ছে।

জানা যায়, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক থেকে কাপ্তাই লেকে পানি কমতে থাকে। মার্চে গিয়ে তা আরও কমে যায়। রুলকার্ভ অনুযায়ী, এ সময় কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৮৫ মিটার এমএসএল (মিন সি লেভেল)। কিন্তু পানি রয়েছে ৭৭ মিটার এমএসএল। প্রচণ্ড গরমে পানির লেভেল দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, পানির লেভেল ৬৮ এমএসএল নেমে এলে পানি ছাড়া এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। যেভাবে এখন পানি কমে যাচ্ছে, তাতে বাকি এক ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটা হলে নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা আরও বাড়বে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, জোয়ারের সময় সাগরের পানি ঢুকে পড়ায় তখন লবণাক্ত পানি এড়াতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয় ওয়াসাকে। তাতে কমে যায় উৎপাদন। ফলে রমজানে অনেক এলাকায় পানির হাহাকার দেখা দেয়। এখন পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠছে। বিভিন্ন শোধনাগার ও গভীর নলকূপ থেকে ওয়াসার পানির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু বর্তমানে তা ৪০ কোটি লিটারের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। নগরীর সরাইপাড়া, পাহাড়তলী ঝর্ণাপাড়া, লালখান বাজার এলাকা, আলকরণ, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, পাঠানটুলীসহ আরও অনেক এলাকায় কমবেশি পানি সংকট লেগেই আছে। এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, ওয়াসা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না। আবার যে পানি সরবরাহ করছে, তাও লবণাক্ত। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে পানির সংকট থাকার কথা নয়। ওয়াসার কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, মূলত কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না। ফলে সাগরের পানি উজানে উঠে আসছে। তবে বৃষ্টিপাত হলে এবং হ্রদে পানি বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত লবণপানি পান করার ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমজাদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘অতিরিক্ত লবণপানি মানুষের উচ রক্তচাপ সৃষ্টির পাশাপাশি কিডনি নষ্ট করে দেয়। যেসব মানুষের কিডনি রোগের উপসর্গ রয়েছে, তারা যদি এ ধরনের পানি পান করেন, তাদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে