প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘনিষ্টদের বিকাশ নম্বরে!

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৪; সময়: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ |
প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘনিষ্টদের বিকাশ নম্বরে!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  মাদারীপুরে কয়েকশ’ প্রতিবন্ধীর তিনমাসের ভাতার লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিকাশ নম্বর পরিবর্তনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় ক্ষুব্ধ অসহায়রা। অফিসে বার বার ধরনা দিয়েও ফেরত পাননি টাকা প্রতিবন্ধীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বিকাশ নম্বরের মালিক সমাজসেবা কর্মকর্তার পরিচিত ও ঘনিষ্টজনেরা। অভিযুক্ত কর্মকর্তা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। আর এমন কর্মকাণ্ডে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তারও দায়সারা জবাব।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুরের বালিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান মৃধার ছেলে ওয়াজেদ মৃধা। ৫৫ বছর বয়সী ওয়াজেদ একটি দুর্ঘটনায় কয়েক বছর আগে হারিয়েছেন ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি। পরে ভারি কোনও কাজ করতে পারেন না তিনি। এরপর সরকারি ভাতার জন্য আবেদন করলে শুরুতে তার নম্বরে কয়েক কিস্তির টাকা পেলেও গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ভাতার মাসের টাকা বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে নিয়ে গেছে প্রতারকচক্র। অফিসে বার বার ধরনা দিয়েও ফেরত পাননি সরকারি টাকা।

এদিকে বড়মহের গ্রামের ইদ্রিস খানের স্ত্রী আফরোজা বেগম। চোখে কম দেখেন তিনি। আর ছোট ছেলে মেহেদি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুজনেই সরকারি ভাতার আওতায়। একইভাবে তাদেরও করা হয়েছে প্রতারণা।

এমন প্রতারণার স্বীকার সদর উপজেলার অনেক প্রতিবন্ধী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উজ্জ্বল মুন্সি গত বছরের ১২ জুলাই সদর উপজেলায় যোগদান করেন। পরে অফিসের তার আইডি থেকে পরিবর্তন করা হয় কয়েকশ’ প্রতিবন্ধীর বিকাশ নম্বর।

অভিযোগ উঠেছে, সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘনিষ্টজনদের বিকাশ নম্বরে নেয়া হয়েছে অসহায় মানুষের এই ভাতার টাকা। এই ঘটনায় দোষীদের বিচারের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।

সমাজসেবা অফিস সূত্র জানায়, মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৭২ জন প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতার আওতায় রয়েছে। তিন মাস পর পর প্রত্যেকের বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হয় ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে।আবেদনের সময় দেয়া হয় প্রতিবন্ধীদের নিজস্ব বিকাশ নম্বর। পরে এই বিকাশ নম্বর পরিবর্তন শুধুমাত্র উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তার অফিসের আইডি থেকে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে করতে পারেন।

প্রতিবন্ধী ওয়াজেদ মৃধা বলেন, আমি তিনমাসের ভাতার টাকা পাইনি। পরে অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমার বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। কয়েক বার টাকা ফেরত চাইলেও কর্মকর্তা উজ্জ্বল মুন্সি বলছে পরের বার একসঙ্গে টাকা ঢুকবে, কিন্তু সেই পাওনা টাকা আর আসেনি। পরে বুঝতে পারছি, আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলের ৫১০০ টাকা বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে আত্মসাৎ করেছে সমাজসেবা কর্মকর্তা। আমাদের কারই বিকাশ নম্বর আমরা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করিনি। কিন্তু অফিস থেকে নম্বর পরিবর্তন করে টাকা তারা তুলে নিয়ে গেছে।

আরেক ভুক্তভোগী ভ্যানচালক মোকলেস মাতুব্বর বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়ায় সরকার ভাতা দেয় গরীবকে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা অফিসের লোকজন বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে আত্মসাত করেছে। এই ঘটনার বিচার চাই, আর আমার টাকা ফেরত চাই।

হাবিবুর রহমান জালাল নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার হাতের দুটি আঙুল নেই। তাই বড় কোনও কাজ করতে পারি না। তিনমাসের ভাতার টাকা না পাওয়ায় বড়ই কষ্টে আছি। সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তার আইডি থেকে আমার বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর বিচার চাই। আর আমার টাকা ফেরত চাই। তা না হলে আল্লাহ ওই কর্মকর্তার বিচার করবে।

সম্প্রতি অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়।

মুঠোফোনে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে উজ্জ্বল মুন্সি বলেন, আমি থাকাকালীন সময়ে তো কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। আমি চলে আসার পর আমার বিরুদ্ধে একটি মহল মিথ্যে অভিযোগ দিচ্ছে। যার কোন ভিত্তি নেই। প্রতিবন্ধীদের বিকাশ নম্বর কিভাবে আপনার আইডি থেকে পরিবর্তন করা হয়েছে-এমন প্রশ্নে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবন্ধীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করা হয়।

মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আশাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবুও জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তদন্ত করে দোষ পাওয়া গেলে নেয়া হবে বিভাগীয় ব্যবস্থা।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, এই ঘটনা তদন্ত করার জন্য এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে