দুর্গাপুরে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের ৩ হেভিওয়েট নেতা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৪; সময়: ২:৪৫ অপরাহ্ণ |
দুর্গাপুরে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের ৩ হেভিওয়েট নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর : নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এখন অপেক্ষা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর শেষ অব্দি কে কে থাকবেন ভোটের মাঠে।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী না দেবার সিদ্ধান্ত নেয়ায় এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থীতা না থাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবার একাধিক প্রার্থীতার কারণ হিসেবে স্থানীয় রাজনৈতিক লবিং-গ্রুপিংকে দুষছেন কেউ কেউ।

চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবার যে তিন হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল মজিদ সরদার এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শরিফুজ্জামান শরিফ।

উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।

অপরদিকে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ সরদার।

পরের দু’দফায় তিনি দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমর্থন কোনটাই পাননি। দলীয় সমর্থন না পেয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

এদিকে দুই প্রবীণ নেতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবার নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন নবীন আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শরিফুজ্জামান শরিফ।

আওয়ামী লীগের এই উদীয়মান নেতা এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি।

এবার দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে সাধারণ ভোটাররা শেষ পর্যন্ত আমাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।

আব্দুল মজিদ সরদার বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চালু করলে দলীয়ভাবে আমাকে সমর্থন দেয়া হয়। আমি দলীয় সমর্থন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম।

দলীয়ভাবে এবারের নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সেহেতু আমি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী একজন প্রার্থী। এই দলের জন্য আমার অনেক ত্যাগ ও শ্রম আছে। আশাকরি সাধারণ মানুষ আমার শ্রম ও ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন।

আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সকল ক্ষেত্রেই তরুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করছেন এবং প্রতিটি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন।

এর আগে ছাত্রলীগ করে সংগঠন সুসংগঠিত করলেও মানুষের সেবা করার সুযোগ সেভাবে পাইনি। এ কারনে বয়সে তরুণ হলেও মানুষের সেবা করতে এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি।

শরিফুজ্জামান আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হলে তরুণ প্রজন্মের জন্য স্মার্ট হাব স্থাপন করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। এছাড়া বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবো।

আওয়ামী লীগের নবীন নেতাদের পাশাপাশি প্রবীণ নেতারাও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিভ্রান্তির ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে রয়েছেন।

একই দলের তিন হেভিওয়েট নেতা প্রার্থী হওয়ায় কোন নেতার পক্ষে থাকবেন, আর কোন নেতার পক্ষে থাকবেন না সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না অনেকেই।

তবে এলাকার উন্নয়নে এবং বিপদ-আপদে এতোদিন যাকে সাথে-পাশে পেয়েছেন তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত; নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো ২১ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২৩ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল।

আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩০ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২ মে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে