তাড়াশে আসামীকে না পেয়ে মামীকে তুলে নিয়ে গেলো পুলিশ, বাড়ি ভাংচুর

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪; সময়: ১০:৪২ অপরাহ্ণ |
তাড়াশে আসামীকে না পেয়ে মামীকে তুলে নিয়ে গেলো পুলিশ, বাড়ি ভাংচুর

নূর ইসলাম রোমান, তাড়াশ : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আসামীকে না পেয়ে তার মামী কে গভীর রাতে জোরপূর্বক ভাবে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই সাথে বাড়িঘরেও চালানো হয়েছে ব্যাপক ভাংচুর। সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে তাড়াশ উপজেলার পংরৌহালী গ্রামে।

মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ বাজারের বাসিন্দা মোঃ শাহিন আহম্মেদের মেয়ে এস এম সুমাইয়া (১৩) ও একই উপজেলা পংরৌহালী গ্রামের বাসিন্দা ও নওগাঁ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আফজাল হোসেনের ছেলে মোঃ রক্তিম (১৩) পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া থানার করতকান্দি রস্তুম আলী বহুমুখি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং বিয়ে করার উদ্দ্যেশে ২০২৩ সালের ২৪ মে তারিখে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরের দিন ২৬ মে মোঃ রক্তিম সহ তার বাবা-মা ও দুই ভাই কে আসামী করে মেয়ের মা মোছাঃ ছালমা খাতুন তাড়াশ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

ওই ঘটনার পর ১১ জুন ভিকটিম এসএস সুমাইয়া কে তাড়াশ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মোঃ আলমগীর হোসেন সিরাজগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। সেখানে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ নাহিদ রহমান শরীফের কাছে লিখিত জবানবন্দী দেয়।

সেখানে সে লিখিতভাবে জানায়, রক্তিম আমার সহপাঠী। তার সাথে চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক চলছে। আমাদের কথা পরিবার জানতো কিন্তু মেনে নেয় নাই।

ওই জবানবন্দিতে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া আরো জানায়, ঢাকার জজ কোর্টে গিয়ে তারা বিয়ে করে। বিয়ের দেন মোহর ছিল দুই লক্ষ টাকা। তারপর থেকে গতকাল পর্যন্ত স্বামীস্ত্রী হিসেবে তারা ঢাকাতে ছিলো। পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি। স্বেচ্ছায় রক্তিমের সাথে গিয়ে তাকে বিয়ে করেছি। এরপর আদালত ভিকটিম সুমাইয়া কে তার পরিবারের হেফাজতে দিয়ে দেয়।

পরবর্তীতে মেয়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভিকটিমের পরিবার সিরাজগঞ্জ সদরের হোসেনপুর মহল্লায় বসবাস করতে থাকেন।

এ মামলায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাড়াশ থানা পুলিশ আসামী রক্তিম কে কিশোর আপরাধ ও তার বড়ভাই ছাত্রলীগ নেতা মোঃ রুবেল হোসেনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়। ওই মামলা সিরাজগঞ্জ আদালতে এখনো চলমান রয়েছে। এবং আসামীদ্বয় জামিনে রয়েছে।

গত ২১ এপ্রিল পৌনে দশটার সময় প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া আবারও রক্তিমের সাথে পালিয়ে যায় মর্মে রক্তিমের বড়ভাই মোঃ রুবেল হোসেন পুলিশকে জানায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিকটিম সুমাইয়ার মা মোছাঃ ছালমা খাতুন আবারও তার মেয়েকে অপহরণ করেছে মর্মে রক্তিমসহ তার এক ভাই ও বাবাসহ ৪/৫ আজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় গত ২৩ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী ২০২৩) ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র দাস কে। শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌঁনে তিনটার দিকে ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র দাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাড়াশ উপজেলার পোংরৌহালী গ্রামে আসামীদের ধরতে অভিযান চালায়। সেখানে তাদের না পেয়ে একই গ্রামে রক্তিমের মামার বাড়িতে তারা অভিযান চালিয়ে রক্তিমের মামী মোছাঃ দেলোয়ারা খাতুন (৪৫ ), কাজের ছেলে কবির ও রফিকুলকে তুলে নিয়ে যায়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তাদেরকে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় রাখা হয়েছে।

মোছাঃ দেলোয়ারা খাতুনের স্বামী মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ মানুষ। তিনি কোনো ওয়ারেন্টভুক্ত বা এজাহার ভুক্ত আসামী না। পুলিশ হয়রানি করার জন্য তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে ডাকাডাকি, টর্চ লাইটের আলোসহ গেট ভেঙ্গে একদল লোক আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। ডাকাত মনে করে আমি পিছন দিয়ে পালিয়ে যাই। আমার ঘরের দরজা খুলতে অস্বীকার করলে তারা বুটের লাথি ও বাঁশে লাঠি দিয়ে এলাপাথারি ভাংচুর করে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে আমার স্ত্রী কে একটি হাইচ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় দুর থেকে দেখতে পাই পুলিশের পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোষাকধারী লোকজনও ছিল। তবে কোনো মহিলা পুলিশকে দেখতে পাইনি।

নজরুল ইসলামের ভাই মোঃ আব্দুস সামাদ অভিযোগ করে বলেন, মাঝ রাতে এমন অভিযানে আমরা ডাকাত মনে করে ভড়কে যাই। পরে যখন আমার ভাবিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর পাই তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। তাড়াশ থানায় খবর নিয়েও কোনো তথ্য পাইনি। আজ (২৭ এপ্রিল) শনিবার সিরাজগঞ্জ সদর থানার ফোন পেয়ে নিশ্চিত হই তাকে সেখানে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের সম্মানহানী হয়েছে। তিনি তো এজাহার ভুক্ত আসামী না। পুলিশ বললেই আমরা সেখানে যেতাম। রাতের বেলা এ তান্ডবের বিচার চাই।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। আমি কিছু বলতে পারবো না।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র দাস বলেন, মহিলাসহ তিনজন কে জিঙ্গাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। জিঙ্গাসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মোছাঃ দেলোয়ারা খাতুনের স্বামী মোঃ নজরুল ইসলামের করা অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ বলেন, অভিযানে অবশ্যই মহিলা পুলিশ ছিল। এছাড়া আসামী ধরতে উপরের চাপ রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে