বদলগাছী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪; সময়: ১২:০৩ অপরাহ্ণ |
বদলগাছী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা।

দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় ভোটের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা নানা দ্বিধায় বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের ভেতরে গৃহদাহ দেখা দেয়।

আর এ কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সেই গৃহদাহ আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে বদলগাছীসহ নওগাঁর তিনটি উপজেলায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারে মাঠে নেমে পড়েছেন। শুরু করেছেন জন ও গণসংযোগ।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আটজন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এর মধ্যে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শামসুল আলম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবর আলী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বদলগাছী ইউনিটের সাবেক কমান্ডার জবির উদ্দিন এফ এফ ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

এছাড়াও আরও তিনজন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন, মিঠু মন্ডল ও শহিদুল ইসলাম বিপ্লব, এস এম সাইদুর রহমান। কিন্তু এদের তিনজনেরই দলীয় কোনো পদ পদবি নেই।

তবে পদে না থাকলেও শহিদুল ইসলাম বিপ্লব ও মিঠু মন্ডল এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে আটজন প্রার্থী থাকলেও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলুর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবর আলীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগ আবু খালেদ বলু, কিছু অংশ শামসুল আলম ও কিছু ভাগ বাবর আলীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আর ইমামুল আল হাসান তিতুর পক্ষে উপজেলা ও ইউনিয়ন যুবলীগের একটি অংশ নির্বাচনে কাজ করছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কোন পক্ষে অবস্থান নেবেন তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিছু নেতাকর্মী।

উপজেলার কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রতীক না দিয়ে স্বতন্ত্র কৌশল গ্রহণ করে ভোট হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, কিন্তু দলের জন্য খারাপ হচ্ছে। যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত।

সবারই কমবেশি কর্মী-সমর্থক আছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ একাধিক শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিভক্তি খুব সহজে দূর হবে না। এই পরিস্থিতি আমি নিজেই দ্বিধাবিভক্তিতে আছি।

ফজলুর রহমানের মতো দ্বিধাবিভক্তিতে পড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কিশোর। তিনি বলেন, ‘দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় খুবই বির্বতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি।

নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ির কারণে দলের জন্য খুব ক্ষতি হচ্ছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদারের পক্ষে কাজ করেছিলাম। এটা সবাই জানে।

তিনি হেরে যাওয়ার পর থেকে আমিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করেছিলাম তারা সবাই দলের মধ্যে বর্তমানে কোনঠাসা অবস্থায় আছি। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা বিভক্তি হয়ে পড়েছে।

এই পরিস্থিতে আমাদের দলের ভেতরে গৃহদাহ আরও প্রকট হতে পারে। তাই এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি নিরবতা পালন করব। কারও পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাব না। আমার মতো দলের অনেক নেতাকর্মীই এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলুর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাকলাইন সুবেল বলেন, ‘সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এটা পুরোপুরি সঠিক নয়।

যাদের বর্তমান কোনো পদপদবি নেই তাদেরকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমি ধরতে চাইছি না। বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দলের কোনো পদে নেই।

অন্য যারা আছেন, তারা কেউ যুবলীগ আবার কেউ অতীতে দল করলেও বর্তমানে কোনো পদে নেই। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলুর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করা আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার মতো উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮০ শতাংশ নেতাকর্মীই তার পক্ষে কাজ করছেন।

বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আল খানের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর ই আজম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে দল থেকে এ ধরণের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।

শামসুল আলম খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ। এছাড়া তিনি আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

গতবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দলের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খালেদ বুলুকে পরাজিত করে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি জয়ী হবেন বলে আশা করছি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে