ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের বাঁচার আকুতি

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৪; সময়: ১২:৪৪ অপরাহ্ণ |
ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের বাঁচার আকুতি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক:  দীর্ঘ অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে লুটপাট হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এরপরও বাঁচার লড়াইয়ে টিকে ছিল বেসিক ব্যাংক। কিন্তু একীভূতকরণের ঘোষণায় ব্যাংকটিকে ফের ঠেলে দেয়া হয়েছে ICU-তে। মাত্র এক মাসেই গ্রাহকরা আমানত তুলে নিয়েছেন আড়াই হাজার কোটি টাকা। এমনকি আস্থাহীনতায় আমানত তুলে নিতে চিঠি দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এমন অবস্থায় ব্যাংকটিকে বাঁচাতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অসহায় আত্মসমর্পণ করে চিঠি লিখেছেন বেসিক ব্যাংকের এমডি।

আর্থিকভাবে সবল একটি ব্যাংক কেবল সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে যে ডুবতে পারে তার বড় উদাহরণ এখন রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। মাত্র কয়েক বছরের লুটপাটে সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যাংকটি। মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে একীভূতকরণের ঘোষণা। অস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে সাধারণ আমানতকারীদের পাশাপাশি সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোও আমানত তুলে নিতে শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগসহ সরকারি নানা দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে তাই বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমানের সরল স্বীকারোক্তি, তারল্য সংকট এমন পর্যায়ে ঠেকেছে তাতে যেকোনো সময়ে ব্যক্তি পর্যায়ের চেক ফেরতের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই সরকারি সংস্থাগুলো যেন টাকা উত্তোলন করে না নেয় এ জন্য সরকারের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। চাওয়া হয়েছে স্বল্পসুদে সরকার থেকে আমানত সরবরাহের নীতি সহায়তা।

চিঠিতে সাম্প্রতিক ব্যাংকটির নানা অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, একীভূত করণের ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কিস্তি বাবদ প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বেসিক ব্যাংক। বৃদ্ধি পায় আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও। গত তিন বছরে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ৫৬৩ কোটি টাকা। এই সময়ে হয়নি নতুন কোনো ঋণ খেলাপি। লোকসানি শাখার সংখ্যা কমেছে অন্তত ১৫টি। ঋণ আমানতের অনুপাত ১১৫ শতাংশ হতে কমে ৮৫শতাংশ এ দাঁড়িয়েছে। নানা সংকট সত্বেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ব্যাংকটি।

কিন্তু বড় ধরণের বিপত্তি শুরু বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সাথে একীভূত হবার ঘোষণার পর থেকে। এরই মধ্যে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন নগদ আড়াই হাজার কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয় এ যেনো কফিনের শেষ পেরেক, শেষ হয়ে গেছে ব্যাংকের পক্ষে বন্ড রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়ার সুযোগও। আন্তঃব্যাংক কল মার্কেটেও টাকা ধার পাচ্ছে না ব্যাংকটি। তাই জানতে চাওয়া হয় একীভূতকরণ নিয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থানও।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিয়মের বাহিরে যে হস্তক্ষেপ সেগুলোর কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল অবস্থানে চলে যায়। সামগ্রীকভাবেওতো ব্যাংকের যে স্বাস্থ্য এটি দুর্বল হওয়ার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

পলিসি রিচার্চ ইন্টিস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, দুপক্ষই লাভবান হতে পারে। একটা ছোট কোম্পানি খুব ভালো প্রসপেক্টাস আছে তাকে নিয়ে নিলো বড় একটি কোম্পানি। কিন্তু আমাদের এখানে ওই পদ্ধতিটা প্রযোজ্য নয়। এখানে একটু চাপ দিয়েই করা হচ্ছে।

বিধিবদ্ধ তারল্য রিজার্ভের ঘাটতিও দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। তাই শেষ বেলায় খড়কুটো ধরে হলেও ডুবন্ত অবস্থা থেকে বাঁচতে চায় ব্যাংকটি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে