কালোটাকা জমি প্রদর্শনের সুযোগ

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৪; সময়: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
কালোটাকা জমি প্রদর্শনের সুযোগ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ‘কর প্রণোদনা’র অংশ হিসাবে কালোটাকা ও লুকানো স্থাবর সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শনে প্রস্তাবিত বাজেটে আবারও ট্যাক্স অ্যামনেস্টি (কর দায়মুক্তি) সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এবার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ২০২২-২৩ করবর্ষের আগে অর্জিত নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটিজ বা এফডিআর আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে।

অন্যদিকে এলাকাভেদে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-ফ্ল্যাট প্রদর্শন করতে পারবেন করদাতারা। এক্ষেত্রে সরকারি অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। অবশ্য হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালোটাকা বিনিয়োগ সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কিছু কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নে ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ প্রদান এবং অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়কর আইনে কর প্রণোদনার অংশ হিসাবে কালোটাকা প্রদর্শনে ধারা সংযোজনের প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন ফ্ল্যাট, জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থসহ অন্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করতে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।

অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইনে নতুন তফশিল যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ আয়বর্ষ ও তার আগের আয় বছরে অপ্রদর্শিত আয় ও সম্পদ নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে প্রদর্শন করা যাবে। বাড়ি, স্থাপনা অথবা ফ্লোর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় তাহলে জরিমানা হিসাবে ১০০ শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে। অবশ্য কর ফাঁকির মামলা আয়কর বিভাগে চলমান থাকলে আইনের এই ধারায় কালোটাকা বা সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ তা কোনোভাবে যৌক্তিক নয়। কারণ যারা কালোটাকা অর্জন করল, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় না এনে এক ধরনের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সারা বছর যারা দুর্নীতি করে, অনিয়ম করে অর্থ উপার্জন করছে বছর শেষে রাজস্ব বোর্ডের কাছে এলে তারা বৈধতা দিয়ে দিলে অন্যান্য করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার যে অঙ্গীকার তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখন ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেন।

নতুন আয়কর আইনে প্রথম তফশিলে বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে (অংশ-১) নির্ধারিত হারে কর দেওয়ার মাধ্যমে ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ রাখার পরও প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে বিধান যুক্ত করা হলো। আয়কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অংশ-১ এ উল্লিখিত হার অনুযায়ী কর দিলে আয়কর বিভাগ প্রশ্ন করবে না। আর নতুন বিধান (অংশ-৩) অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর দিলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না।

এক্ষেত্রে আয়কর আইনে করদাতাকে সুরক্ষা দেওয়া আছে। আয়কর আইনের ধারা-৩ এর উপ-ধারা-২ এ বলা আছে, অন্য কোনো আইন বা তার কোনো বিধান যদি আয়কর আইনের কোনো বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সেই আইন বা আইনের বিধানের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি অকার্যকর বলে গণ্য হবে।

কোন এলাকায় কত দিলে প্রশ্ন করবে না : ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, কাফরুল থানা, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা। এছাড়া ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা।

পাশাপাশি ঢাকার বংশাল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, চকবাজার, কোতোয়ালি থানা, লালবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর, শাহজাহানপুর, মিরপুর, দারুসসালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা, আদাবর, গেণ্ডারিয়া, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, উত্তরা পশ্চিম থানা, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা, পল্লবী ও ভাটারা থানা, চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি থানা, নারায়ণগঞ্জের সদর থানা, সোনারগাঁ, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর থানা এবং গাজীপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলা। চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী, চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, বন্দর, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামি ও সদরঘাট থানা, গাজীপুরের জয়দেবপুর, কালীগঞ্জ, বাসন, কোনাবাড়ী, গাছা, টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম থানা এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা ও আড়াইহাজার উপজেলার অন্তর্গত সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে ১৫০০ টাকা।

এছাড়া ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও অন্য কোনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সদরে অবস্থিত সব পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার টাকা।

এছাড়া ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে দুই হাজার টাকা। আর যে কোনো পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে ৮৫০ টাকা। এছাড়া ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার টাকা। যে কোনো এলাকার সব মৌজা স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা। ভূমির করহার প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে